ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিশৃঙ্খল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাবে কে?

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
বিশৃঙ্খল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাবে কে? নগরের সড়কে বিশৃঙ্খলভাবে চলছে যানবাহন। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়কে নৈরাজ্য থামাতে প্রশাসন, পুলিশ, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক-চালকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ একযোগে কাজ করার ঘোষণা দেয়। তবে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা এ আন্দোলনের ১ বছর পার হতে চললেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি চট্টগ্রামের সড়কে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, লাইসেন্সবিহীন চালক, অ্যানালগ ট্রাফিক সিস্টেম, ঘুষ বাণিজ্য, ফুটপাত দখল, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পর্যাপ্ত বাস টার্মিনালের অভাব, অবৈধ পার্কিং, যেমন খুশি তেমন স্টাইলে গাড়ি চালানো, বাড়তি ভাড়া আদায়, আইন না মানার মানসিকতাসহ নানা কারণে চট্টগ্রামের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বরং বেড়েই চলেছে।

তবে এসব বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের, তারা একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়েই দায় সেরেছেন। সমাধানের কোনো উপায় বলতে পারেননি তারা।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে চট্টগ্রামের বিশৃঙ্খল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাবে কে?

নগরের সড়কে বিশৃঙ্খলভাবে চলছে যানবাহন।  ছবি: উজ্জ্বল ধর

কাজের চেয়েঅকাজবেশি করছে প্রশাসন

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মনজুরুল আলম মঞ্জু বাংলানিউজকে জানান, সড়কে নৈরাজ্য থামাতে শুধু মালিক-চালককে দোষ দিলে হবে না। আমরাও সড়কে শৃঙ্খলা চাই। এ জন্য সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি লাইসেন্সবিহীন চালককে ধরতে হবে। কিন্তু এসব কাজ না করে ম্যাজিস্ট্রেটরা কোন বাসে একটি সিট বেশি, ট্রাফিক পুলিশ কোন বাস থেকে ঘুষ নিতে পারে-এসব নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে।

তিনি দাবি করেন, নিরাপদ সড়কের জন্য আমরা প্রশাসনকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। কিন্তু এ জন্য আমাদের ‘হয়রানি’ করা বন্ধ করতে হবে। ‘অযথা’ মামলা দেওয়া যাবে না। ঘুষ আদায় ও চাঁদাবাজি করা যাবে না। একদিকে নিরাপদ সড়ক চাইবেন, অন্যদিকে মালিক-চালককে ‘হয়রানি' করবেন তা হতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেবো।

মালিকরা সড়কে শৃঙ্খলা চায় না

বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু অভিযান চালিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। এ জন্য সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যাদের তাদের যেমন ভূমিকা রাখতে হবে, তেমনি পরিবহন মালিকদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু কেউই আমাদের সহযোগিতা করছেন না।

তিনি বলেন, পরিবহন নৈরাজ্য থামাতে দিন-রাত অভিযান পরিচালনা করছি। শুধু রমজানেই ৩৪৪টি মামলায় ২০ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঈদের পরেও প্রতিদিন নগরের কোনো না কোনো এলাকায় দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এসব অভিযানের পরেও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। এর মূল কারণ, পরিবহন মালিকরা সড়কে শৃঙ্খলা চায় না।

নগরের সড়কে বিশৃঙ্খলভাবে চলছে যানবাহন।  ছবি: উজ্জ্বল ধর

জোর করে আইন মানানো যায় না

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) হারুনুর রশিদ হাযারী বাংলানিউজকে জানান, জনবল সংকট থাকা সত্বেও চট্টগ্রামের মতো এতো বড় শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। নানা অভিযোগ থাকলেও আমরা চেষ্টা করি সড়কে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে। কিন্তু পর্যাপ্ত পার্কিং এর অভাব, যেমন খুশি তেমন স্টাইলে গাড়ি চালোনোর মানসিকতার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের অনেকের মধ্যে ট্রাফিক আইন মানার মানসিকতা নেই। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করাকে আমরা কোনো অপরাধই মনে করি না। এভাবে তো হয় না। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। কারণ জোর করে আইন মানানো যায় না। আইন মানার মানসিকতা নিজের মধ্যেই থাকতে হবে। তবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।

নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার তাগিদ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত বলেন, নিরাপদ সড়কের কথা এলে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কথা এলে আমরা সবাই বড় বড় কথা বলি। কিন্তু শুধু মুখে বড় বড় কথা বলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। এ জন্য আইনের প্রয়োগ, উন্নত ও আধুনিক ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যেমন জরুরি তেমনি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রশাসন, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। নইলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।