ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঈদ মৌসুমেই তারা আসেন নগরে

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৯
ঈদ মৌসুমেই তারা আসেন নগরে নগরে বেড়েছে মৌসুমী রিকশা

চট্টগ্রাম: নন্দনকানন ১ নম্বর গলির মুখ থেকে কাজীর দেউড়ী কর্ণফুলী টাওয়ারের সামনে পর্যন্ত  ভাড়া ৩০ টাকা। কিন্তু ৫০ টাকা দাবি করলেন রিকশাচালক। কথায় মনে হলো, ঈদ মৌসুমে তিনি এসেছেন নগরে। অন্য সময় গ্রামেই চালান রিকশা।

বাড়তি আয়ের আশায় ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে শহরজুড়ে বেড়েছে মৌসুমী রিকশা চালক। তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া দাবি করছে যাত্রীর কাছে, কখনো জড়াচ্ছে তর্কে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার সংখ্যা ৫৭ হাজার ৩৬৮টি। রিকশা চালক ও মালিকদের আছে ১৩টি সংগঠন।

এসব সংগঠন নগরে চলাচলকারী রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। লাইসেন্স ছাড়া প্রায় দেড় লক্ষ রিকশা চলাচল করে নগরে। ঈদের সময় তা আরও বেড়ে যায়। এতে যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। এ জট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।

নগরের চকবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহর, ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও নিউ মার্কেট এলাকায় গত এক সপ্তাহের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌসুমী রিকশা চালকরা যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে গিয়ে বারবার পথ চিনিয়ে দেয়ার আবদার করছে। আগে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ না দিয়ে গন্তব্যে নামানোর পর অতিরিক্ত ভাড়াও চাইছে তারা। এ নিয়ে ঘটছে হাতাহাতির ঘটনাও।

প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকে নগরে রিকশা চালানোর কাজ শুরু করে নিম্ন আয়ের লোকজন, যাদের কেউ দিনমজুর, জেলে বা কৃষক। আন্দরকিল্লা মোড়ে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকালে কথা হয় রিকশাচালক মাজেদের সঙ্গে। তিনি জানান, নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে এসেছেন ৮ রমজানে। ঈদের আগে ফিরবেন বাড়িতে।

খোঁজ পাওয়া গেছে ফেণী, চাঁদপুর, ঢাকা, বগুড়া, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া থেকে আসা মৌসুমী রিকশা চালকেরও। তারা বলছেন, গ্রামে একমাস রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় সেটা এখন শহরে মিলে এক সপ্তাহ চালালেই। রিকশা মালিককে দৈনিক ১শ’ টাকা জমা দেয়ার পরও ৪শ’-৫শ’ টাকা থাকছে।

নগরে বেড়েছে মৌসুমী রিকশাকয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, শহরের রিকশা চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া চাইছে। তাদের দেখাদেখি মৌসুমী চালকরাও যাত্রী নামানোর সময় ঈদ বখশিশ চাইছে। নতুন-পুরোনোরা মিলে অভিনব পদ্ধতিতে ছিনতাইও করছে।

টেরীবাজার থেকে পাইকারি কাপড় ও মশারী কিনে রিকশাযোগে সম্প্রতি গন্তব্যে ফিরছিলেন ব্যবসায়ী মনির উল্লাহ। সিনেমা প্যালেস সড়ক পার হয়ে শহীদ মিনার সড়কে এসে রিকশাচালক দাঁড়িয়ে যায়। রিকশার চাকায় সমস্যা হয়েছে জানিয়ে তাকে নামতে বলা হয়।

এর পরের ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না মনির উল্লাহ। কয়েকজন লোক এসে তার সঙ্গে অহেতুক ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। কথা কাটাকাটির ফাঁকে কাপড়ের বস্তাসহ রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় সেই চালক। আশপাশে খুঁজেও তার হদিস মিলেনি।  

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এই মুহূর্তে নগরে সৃষ্ট যানজটের জন্য দায়ী  মৌসুমী রিকশা। এসব রিকশার জন্য নির্ধারিত স্টেশন না থাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে সৃষ্টি করছে যানজট। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা।

সিএমপির উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) হারুনুর রশিদ হাযারী বাংলানিউজকে বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ পুরো রমজান মাসজুড়ে রাত-দিন কাজ করছে।

তিনি বলেন, নগরে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার চেয়ে অবৈধ রিকশার সংখ্যাই বেশি। সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগকে আমরা এ ব্যাপারে অবহিত করেছি, কিন্তু কোনও ফল হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৯
এসি/টিসি                   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।