ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছুটি ছাড়া ৭ মাস অনুপস্থিত চিকিৎসক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
ছুটি ছাড়া ৭ মাস অনুপস্থিত চিকিৎসক ডা. রীতা পাল

চট্টগ্রাম: নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ছুটি ছাড়াই সাত মাস কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছেন পাঁচলাইশ পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের চিকিৎসক ডা. রীতা পাল। ফলে ওই কার্যালয়ে সেবা নিতে যাওয়া রোগীরা পড়েছেন বেকায়দায়। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

বিষয়টি স্বীকার করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. উ খ্যে উইন বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে এ চিকিৎসক কোথায় আছেন, কেন আসছেন না; এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি তার সহকর্মী ও উর্ধ্বতন কর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. রীতা পাল দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। তিনি কানাডায় আছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ছাড়া ওই চিকিৎসক কানাডার সাসক্যাচুয়ান শহরে অবস্থান করছে বলে নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কমেন্টের মাধ্যমে এক বন্ধুকে জানিয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে জানতে ডা. রীতা পালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে গত বছরের ৬ আগস্ট পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. উ খ্যে উইন স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে জানা যায়, পারিবারিক কারণ ও অসুস্থ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট থেকে ৬০ দিনের ছুটিতে যান ডা. রীতা পাল। ৬ অক্টোবর তার ছুটি শেষ হলেও অদ্যবধি তিনি কর্মস্থলে যোগ দেননি। প্রাপ্ত ছুটি শুধু বাংলাদেশে অবস্থানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র জানায়, নগরের মুরাদপুরে অবস্থিত পাঁচলাইশ পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ রয়েছে ৮টি। সেখানে কর্মরত রয়েছেন ৪ জন। তারমধ্যে চিকিৎসক ডা. রীতা পাল অনুপস্থিত থাকায় তিনজন দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি রীতা পালের অনুপস্থিতিতে ওই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বোয়ালখালী পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের চিকিৎসক শামীমা হাসনাত।

সম্প্রতি পাঁচলাইশ পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে সামনে কথা গৃহিনী আসমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়ে জানতে এসেছেন। তবে ওইদিন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক না থাকায় সেবা না পেয়ে ফিরতে হয়েছে আসমা খাতুনকে।

বাংলানিউজকে আসমা খাতুন বলেন, এসে জানলাম এখানে সপ্তাহে দু’দিন চিকিৎসক থাকেন।

এদিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী ডা. শামীমা হাসনাত বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছি। অফিস আদেশ অনুযায়ী সপ্তাহে দুইদিন পাঁচলাইশ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

‘এমনিতে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। এজন্য সেবা দিতে গিয়ে হিমশিমে পড়তে হয়। ফলে দুই অফিসে দায়িত্ব পালনের কারণে ঠিকমতো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি দুটানার মধ্যে সেবা দিতে হচ্ছে। ’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. উ খ্যে উইন বাংলানিউজকে বলেন, ছুটি শেষ হওয়ার পরেও ডা. রীতা পাল দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই চিকিৎসকের স্থলে নতুন চিকিৎসক নিয়োগের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

‘দুই মাস ছুটি শেষে ডা. রীতা পাল ছুটি বাড়ানোর আবেদন করেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটি অুনমোদন দেয়নি। এরপর থেকে সাত মাস ধরে তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। ’

বিদেশে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. উ খ্যে উইন, সরকারি আদেশ (জিও) ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিদেশ যেতে পারেন না। যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সত্যতা মেলে তাহলেও ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে।

একজন সরকারি কর্মকর্তা ছুটি না নিয়ে এতদিন অনুপস্থিত থাকতে পারেন কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, ছুটি ছাড়া একদিন অনুপস্থিত থাকার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, সরকারি আদেশ ছাড়া বিদেশ গেলে আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। এ কারণে ওই চিকিৎসক চাকরিও হারাতে পারেন। পাশাপাশি অনুপস্থিতির কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
এসইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।