ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁস’ বঙ্গোপসাগর: মৎস্য প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
‘স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁস’ বঙ্গোপসাগর: মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: রূপকথার গল্পে কৃষক সব স্বর্ণের ডিম এক সঙ্গে পেতে হাঁস জবাই করেছিলেন। কিন্তু একটি ডিমও পাননি। বরং হারাতে হয়েছে স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁসকে। বঙ্গোপসাগর আমাদের জন্য রূপকথার সেই স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁস। বিরতি না দিয়ে সারা বছর যদি আমরা এখানে মাছ আহরণ করি, তাহলে মাছ আর থাকবে না। সব মাছ শেষ হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ২০ মে থেকে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মাছ আহরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।

আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, আমি হাওর অঞ্চলের মানুষ।

৫০-৬০ বছর আগেও আমাদের গ্রামে গরুর গাড়ি নিয়ে মাছ আনতে হতো। কিন্ত অতিরিক্ত আহরণের কারণে হাওরে এখন মাছ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আগের ১০০ ভাগের বিপরীতে এখন ১০ ভাগ পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই উপকূলীয় এলাকার মানুষ বেকার হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মৎস্য অধিদফতরের অনুসন্ধানী জাহাজ নিয়ে আমরা বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। সেখানে দেখা গেছে, মাছের সংখ্যা বঙ্গোপসাগরে এখন অনেক কমে এসেছে। এ অবস্থায় নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত মাছ আহরণ চলতে থাকলে বেশি দিন লাগবে না- কয়েক বছরের মধ্যেই বঙ্গোপসাগর মাছ শুন্য হয়ে যাবে। তখন ৬৫ দিন মাছ আহরণ বন্ধ রাখলে যে কষ্ট পাবেন, তা ৬৫ বছরেও লাঘব হবে না।

বক্তব্য দেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।  ছবি: সোহেল সরওয়ার

‘প্রজনন সময়ে মা মাছ যদি ডিম ছাড়তে না পারে, মা মাছ আহরণ করা হয়- তাহলে মাছ বৃদ্ধি পাবে না। আমাদের অসাবধানতার কারণে ইতোমধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক গুলো যাওয়ার পথে। প্লিজ, বঙ্গোপসাগরকে মাছ শুন্য করবেন না। একটু কষ্ট হলেও সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়তা করুন। ’ যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেদের যাতে কষ্ট না হয়, এজন্য আমরা বৃহৎ কর্মসূচি নিয়েছি। আগামী বছর থেকে জেলেদের শুধু মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে না। জেলেদের আমরা ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন উপকরণ দেবো। জালের উপর, মাছের উপর যাতে তাদের নির্ভরতা কমে আসে। তারা যাতে মাছ ধরার পাশাপাশি অন্যভাবেও সংসার চলাতে পারে।

সভায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সিটি মেয়র হিসেবে আমি একদিকে জনপ্রতিনিধি আবার অন্য দিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তাই আমাকে সরকারের সঙ্গে জনগণের সেতুবন্ধনকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে যেমন আমি ভূমিকা রাখবো, তেমনি কোনো আদেশের কারণে জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কী না- সেটাও আমাকে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, মাছের প্রজনন সময়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা প্রয়োজন। তবে ৬৫ দিন দীর্ঘ সময়। এতো সময় মাছ না ধরলে জেলেরা কীভাবে চলবে সেটা আমাদের ভাবতে হবে। জেলেদের জন্য বিকল্প কী কী ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বসতে হবে। কারণ বেকার হয়ে সংসার চালাতে না পারলে তারা অপরাধে জড়াতে পারে। যার প্রভাব পড়বে সবখানে।

সভায় ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি, জলদাস সমবায় সমিতিসহ মাছ ধরার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সমিতির নেতারা ২০ মে থেকে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মাছ আহরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বিবেচনার আহ্বান জানান। এ বছর বাদ দিয়ে আগামী বছর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানান।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডলের সভাপতিত্বে সভায় জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের অধ্যাপক সাইদুর রহমান, নৌ-বাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি, জলদাস সমবায় সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সমিতির প্রধানরা অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad