ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জেলে থেকে খুনের নির্দেশ, জড়িত কিশোর গ্যাং

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
জেলে থেকে খুনের নির্দেশ, জড়িত কিশোর গ্যাং রাজু হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার সাতজন

চট্টগ্রাম: নগরের ডবলমুরিং থানাধীন হাজীপাড়া এলাকায় রিকশাচালক মো. রাজু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, এক মাদক ব্যবসায়ীর কারাগারে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। পুরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে একটি মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাং।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।

গত ১৪ মে ভোরে ডবলমুরিং থানাধীন হাজীপাড়া এলাকায় রিকশাচালক মো. রাজুকে বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে জখম করা হয়।

পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজু।

ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি গ্রেফতার ও হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।

গ্রেফতার আটজন হলেন- শিমুল দাশ (২০), তানভির হোসেন প্রকাশ সিফাত (১৮), মো. সুজন প্রকাশ মধু (১৮), মো. রাকিব হোসেন প্রকাশ শাহ রাকিব (১৮), মো. নুর নবী (১৮), মেহেদী হাসান রুবেল (১৮), ওসমান হায়দার কিরন (১৮) ও সেলিনা আক্তার সেলি (৪৫)।

হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রপুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম জানান, গত ২৭ এপ্রিল ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান মাদক ব্যবসায়ী ছগির হোসেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের পেছনে তার সহযোগী মফিজকে সন্দেহ করেন। পরে কারাগারে বসে মফিজকে খুনের পরিকল্পনা করেন।

গ্রেফতার হওয়ার ৫ দিন পর কারাগারে দেখা করতে যান ছগিরের স্ত্রী, ছেলে কিরনসহ কয়েকজন। তখন মফিজকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন ছগির হোসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৩ মে খুনের খরচ বাবদ ছগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেলী শুক্কুর নামে একজনকে ১ হাজার টাকা ও ছগিরের ছেলে ওসমান হায়দার কিরন একটি কিরিচ দেন।

পরের দিন (১৪ মে) সবাই হাড্ডি কোম্পানীর মোড়ে রুবেলের টং দোকানের সামনে জড়ো হন ছগিরের ছেলে কিরন, শুক্কুর, শিমুল, রাকিব, সিফাত। সেখারে খুনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। এ সময় কিরন ব্যাগে করে নিয়ে আসা চাইনিজ কুড়াল রাকিবকে দেয় ও ছুরি সিফাতকে দেয়। পরে রাত ১১টার দিকে কিরন বাসায় চলে যায়। অন্যরা ওখানে অবস্থান নেয়।

ভোরে ফজরের নামাজের পর হত্যায় অংশ নিতে শিমুল, শুক্কুর, রাকিব, সিফাত, সুজন প্রকাশ মধু মফিজের ভাড়া ঘরে প্রবেশ করে। পাহারা দেওয়ার জন্য বাইরে অংশ নেয় নুর নবী ও রুবেল।

ভাড়া ঘরে মফিজের রুম মনে করে পাশের রুমে (রিকশাচালক রাজু যে রুমে থাকতেন) প্রবেশ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা। ঘুমন্ত অবস্থায় রাজুকে মফিজ মনে করে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে আহত করে তারা। পরে লোকজনের চিৎকারে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ওই সময় টার্গেট হওয়া মফিজও তার রুমে ছিলেন।

আমেনা বেগম জানান, ছগির হোসেন একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছগিরের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় মোট সাতটি মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) কামরুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) আশিকুর রহমান, ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেনসহ অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক অর্নব বড়ুয়া জানান, ছগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেলি (৪৫) ও শিমুল দাশের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ডবলমুরিং থানায় মামলা রয়েছে। শিমুল, সিফাত, সুজন, রাকিব, নুর নবী, রুবেলসহ একটি কিশোর গ্যাংকে নিয়ন্ত্রণ করে ছগির হোসেন। তাদেরকে ছগির সেবন করার জন্য ইয়াবা সরবরাহ করেন বলে তারা সবাই ছগিরের অনুগত।

গ্রেফতার আসামিদের দেওয়া তথ্যে খুনে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান এসআই অর্নব বড়ুয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।