নগরের অভিজাত বুটিক হাউস ও শপিংমলগুলোতে এখান থেকে সরবরাহ করা কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। কারিগরদের সুনিপুণ হাতে তৈরি হওয়া নকশার এসব পোশাক চট্টগ্রামে বেশ জনপ্রিয়।
প্রায় ২৩ বছর ধরে এ কাজে যুক্ত চয়েস কারচুপি হাউজের কারিগর মো. রাশেদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ঈদ এলেই চাপ বেড়ে যায়। এছাড়া পুরো বছর তেমন কাজ থাকে না।
জারদৌসের কারিগর মো. সালাম বলেন, এখান থেকে কাজ শিখে অনেক কারিগর এখন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে এ পেশায় জড়িত হয়েছে। একসময় এক একটি শাড়িতে পুরো মাসজুড়ে ৭০-৮০ হাজার টাকার কাজও করেছি। তখন ব্যবসা আরও জমজমাট ছিল।
ওয়্যারলেস এলাকার মোহাম্মদ রাজু নামের আরেক দোকানি বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো নকশার ছবি দেখালে আমরা হুবহু সে ধরনের কাজ করে দিতে পারি। সালোয়ারে কারচুপির কাজে ২-১৫ হাজার টাকা, প্রতিটি থ্রিপিসে দেড়-দুই হাজার টাকা, লেহেঙ্গায় ৫-১০ হাজার টাকা, বোরকা ২-৫ হাজার টাকা, ওড়না এক-দুই হাজার টাকা, শাড়ি ১০-৩০ হাজার টাকা এবং পাঞ্জাবিতে এক হাজার থেকে ৫-৬ হাজার টাকায় জরি-চুমকি-পুঁতি বসিয়ে কারচুপি ও জারদৌসের কাজ করা হয়।
ঝাউতলার পাপ্পু বুটিক হাউজের মালিক খালিদ জাফর বলেন, বিদেশী পোশাকে বাজার দখলসহ নানা কারণে এখানকার কারিগরদের কাজের ক্ষেত্র অনেকটা সংকুচিত হয়ে গেছে। সারাবছর তেমন কাজ না থাকায় তারা অন্য পেশায় চলে গেছে। তবে ঈদের আগেই গ্রাহকদের কাপড় বুঝিয়ে দিতে হয়। তাই চাপ সামলাতে এসময় বাড়তি লোক নিয়োগ দিয়েছি। পরিবারের সদস্যরাও কাজে সহযোগিতা করছে। এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে।
তবে মেশিনের তৈরি ভারতীয় লেইস বাজারে আসায় পাথর, পুঁতি, জরি, চুমকির কাজের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে বলে জানান আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. বাবলু। কলোনিতে মেশিনে কোনো কাজ হয় না বলেও জানান তিনি।
বিহারি কলোনির বাসিন্দা সালমা খাতুন জানান, তার মেয়ে মালেকা আগে কারচুপি ও জারদৌসির কাজ করতো। ৫-৬ জন কারিগর ছিল। এখন আগের মতো কাজ না থাকায় সে গার্মেন্টে চাকরি করছে। তার মেয়ের মতো এ কলোনির অনেক মেয়ে এখন গার্মেন্টে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেঝেতে বসে কাঠের পাটাতনে রেখে জামদানি, জর্জেট, শিফন, নেট, সিল্কের কাপড়ে বাহারি রঙের পাথর, পুঁতি, জরি, চুমকি বসিয়ে সুঁই-সুতোর কারুকাজে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মনোমুগ্ধকর নকশা। পোশাকে এসব নকশা এঁকে যেসব কারিগররা দিচ্ছেন নান্দনিক রূপ, তাদের জীবনের নকশাই এখন ভালোভাবে আঁকতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
এসি/টিসি