ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অসহায় শ্রমিকদের আইনি সহায়তা মেলে যেখানে

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৯
অসহায় শ্রমিকদের আইনি সহায়তা মেলে যেখানে চট্টগ্রামের শ্রমিক আইন সহায়তা সেল কার্যালয়। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: মিলিনিয়াম সার্ভিস সিকিউরিটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতেন নারায়ন পাল। চলতি বছরের ৮ মার্চ কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দেখিয়েই জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত করে তাকে। ১০ মার্চ এ নিয়ে শ্রমিক আইন সহায়তা সেলে অভিযোগ করেন তিনি।

নারায়ন পালের অভিযোগের ভিত্তিতে মিলিনিয়াম সার্ভিস সিকিউরিটি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বরাবর অনুযোগপত্র পাঠায় শ্রমিক আইন সহায়তা সেল। পরে অলটারনেটিভ ডিসপিউট রেজুলেশনের (এডিআর) মাধ্যমে উভয় পক্ষের সম্মতিতে চাকরি ফিরে পান নারায়ন পাল।

সাজিদ কটন মিলসে সিনিয়র মেইনটেইন্স অফিসার পদে কাজ করতেন ইউসুফ মোল্লা। গত বছরের ২২ মে চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন তিনি।

কর্তৃপক্ষ আবেদনটি গ্রহণ করে ২২ জুন তাকে অব্যাহতি দিলেও বকেয়া বেতন এবং অব্যাহতি জনিত ক্ষতিপূরণ পাননি ইউসুফ। ১৭ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে শ্রমিক আইন সহায়তা সেলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইউসুফ মোল্লার অভিযোগের ভিত্তিতে সাজিদ কটন মিলস কর্তৃপক্ষ বরাবর অনুযোগপত্র পাঠায় শ্রমিক আইন সহায়তা সেল। পরে অলটারনেটিভ ডিসপিউট রেজুলেশনের (এডিআর) মাধ্যমে ইউসুফ মোল্লাকে বকেয়া বেতনের ৩০ হাজার এবং অব্যাহতি জনিত ক্ষতিপূরণের ৪০ হাজারসহ মোট ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেয় শ্রমিক আইন সহায়তা সেল।

শুধু নারায়ন পাল এবং ইউসুফ মোল্লা নন- চাকরি হারানো, বকেয়া বেতন ও অব্যাহতি জনিত ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত এরকম ৩২১ জন কর্মচারি এবং শ্রমিকের চাকরি, বকেয়া ও ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিয়েছে চট্টগ্রামের শ্রমিক আইন সহায়তা সেল।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে চট্টগ্রামের শ্রমিক আইন সহায়তা সেলে হটলাইনের মাধ্যমে তথ্যসেবা নিয়েছেন ১ হাজার ২১০ জন। মৌখিক পরামর্শ নেন ১ হাজার ১৩৫ জন। আইনগত সহায়তা প্রার্থী ছিলেন ৬০১ জন।

এর মধ্যে এডিআরের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে ৩২১ জন অভিযোগকারীর। সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় শ্রম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ২১১টি। আর ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ১ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫৩ টাকা।

শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের কোর্ট অফিসার মো. আবুল হাসনাত বাংলানিউজকে জানান, কোনো শ্রমিক বা কর্মচারিকে শ্রম আইন না মেনে টার্মিনেট করলে, বকেয়া বেতন বা অব্যাহতি জনিত ক্ষতিপূরণ না দিলে ওই শ্রমিক বা কর্মচারি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের সহায়তা নিতে পারেন।

তিনি বলেন, প্রথমে ভুক্তভোগী শ্রমিককে সেলের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হয়। এরপর অভিযোগটি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কারখানাকে একটি অনুযোগপত্র পাঠাই আমরা। এরপর দুই পক্ষকে ডেকে এডিআরের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হয়। বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।

এক প্রশ্নের উত্তরে মো. আবুল হাসনাত জানান, সরকার শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় এ সহায়তা সেল চালু করেছে। তবে সহায়তা সেল সম্পর্কে না জানার করণে, সচেতনতার অভাবে এখনো এ সেলে সহায়তা প্রার্থীর সংখ্যা কম। তবে যারাই আসেন তাদের হটলাইনের মাধ্যমে, মৌখিক পরামর্শের মাধ্যমে, আইনগত সহায়তার মাধ্যমে আমরা সেবা দিয়ে থাকি। শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় কাজ করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।