ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৮০ বছর বয়সেও সংসারের জন্য লড়াই

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৯
৮০ বছর বয়সেও সংসারের জন্য লড়াই মাহবুবুল আলম ও আব্দুল হালিম

চট্টগ্রাম: ২৫ বছর কাজ করেছেন ঢাকার হাজারীবাগ ট্যানারিতে। কখনও খেয়ে কখনও না খেয়ে থেকেছেন। তবুও পরিবারের সদস্যদের বুঝতে দেননি। ঢাকায় কাজের অভাবে চলে আসেন চট্টগ্রামে। তার দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হলেও দিনমজুরের কাজ করে দুই মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন।

তিনি আব্দুল হালিম। ৮০ বছর বয়সী হালিম স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে এখন কাজীর দেউড়ীর দুই নম্বর গলিতে থাকেন।

অন্য ১০জন দিনমজুরের মতো এ বয়সেও কাজীর দেউড়ীতে সকাল সকাল এসে বসে পড়েন। শ্রমিক বেচাকেনার এই হাটে কখন তাকে কাজের জন্য ডাকবেন সেই আশায় থাকেন।

আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকায় ১৯৭১ সালের আগে কাজের অভাব ছিল না। কিন্তু যুদ্ধের পর কাজের অভাব দেখা দেয়। এরপরও ছেলেমেয়েদের বুঝতে দেননি। অল্প টাকার বিনিময়ে রাত-দিন পরিশ্রম করেছি। দুই ছেলেকে কাজ শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কিন্তু তারা দুজনই বিয়ে করে এখন আলাদা। ছোট দুই মেয়ে এখনও অবিবাহিত। তারা যাতে মানুষের মতো মানুষ হয়, সেজন্য পড়ালেখা করাচ্ছি।

তিনি বলেন, ৮০ বছর পার করলেও এখনও বয়স্ক ভাতা পাইনি। সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, দুই মেয়ের পড়ালেখা খরচ চালানোর জন্য যেন বয়স্ক ভাতা দেয়।

শুধু আবদুল হালিম নয়, শ্রমিক বেচাকেনার হাটে আরও কয়েকজন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি সংসারের জন্য লড়ছেন। যেমন আরেকজন মাহবুবুল আলম। বয়স ৬৩। বাড়ি ফটিকছড়ি।

তার এক ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে ছেলেটা সবার বড়। কিন্তু তিনি প্রতিবন্ধী। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে, সবার ছোট মেয়েটা ফটিকছড়িতে একটি মাদ্রাসায় পড়ছে।

দিনমজুর হলেও পদ্মা সেতু থেকে ঢাকার মেট্রো ট্রেন পর্যন্ত দেশের সব খবর জানা আছে মাহবুবুল আলমের। তিনি বলেন, ২০০০ সালের দিকে চট্টগ্রামের মিল ফ্যাক্টরিতে কাজ করেছি। কিন্তু বিএনপি সরকারের আমলে কর্মী ছাঁটাই হলে বাদ পড়ে যাই। ওই সময়ে চাকরি বহালের দাবিতে রাস্তায় অনেক আন্দোলন করেছি।

'তারপর ওমানে চলে যাই। কিন্তু সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে দেশে এসে পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডায়বেটিস হয়েছে আমার। আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ হয়ে এখন দিনমজুরের কাজ করছি। ' বলেন মাহবুবুর আলম।

তিনি বলেন, বড় ছেলেটা জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। অনেক কষ্টে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আগের মতো এখন তেমন কাজ করতে পারি না। অবিবাহিত মেয়ে ও ছেলের জন্য চিন্তা হয়। মারা গেলে তাদের দেখবে কে?

বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৯
জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।