ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

খেলা শেষে মেলায় গৃহস্থালি পণ্য কেনার ধুম

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
খেলা শেষে মেলায় গৃহস্থালি পণ্য কেনার ধুম মেলায় মাটির জিনিষপত্র দেখছেন এক ক্রেতা। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: নগরের লালদীঘি মাঠে আবদুল জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে বৈশাখী মেলার তৃতীয় দিনে গৃহস্থালি পণ্য কেনার ধুম পড়েছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ভোর থেকে দম ফেলার ফুরসত মিলছে না দোকানিদের। কেউ একদামে বিক্রি করছেন। আবার কেউ দর কষাকষির সুযোগ রেখে দাম হাঁকছেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও এক বর্গকিলোমিটার জুড়ে বসেছে মেলা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজারো পদের পণ্যসামগ্রী এনেছেন দোকানিরা।

শীতলপাটি মিলছে সোনালী ব্যাংকের সামনে আর পুরাতন গির্জা এলাকায়। একেকটি রঙিন শীতলপাটি সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পাশাপাশি প্লাস্টিকের মাদুরও বিক্রি হচ্ছে বেশি।

>> জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শাহজালাল

মেলাজুড়েই তালপাতা, বাঁশ, কাপড়, বেতসহ বিভিন্ন উপকরণে তৈরি হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে। বাঁশখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ এলাকার ভালোমানের একজোড়া হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। সর্বনিম্ন ৩০ টাকায়ও মিলছে হাতপাখা।

মেলায় বেড়েছে শীতল পাটির চাহিদা।  ছবি: বাংলানিউজসপরিবারে মেলায় এসেছেন ফিরিঙ্গিবাজারের আবুল হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সারা বছর আমরা অপেক্ষা করি এ মেলার জন্য। এখান থেকে সংসারের টুকিটাকি সব জিনিস সংগ্রহ করি। প্রতিবছরই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তবুও এক মেলায় সব জিনিস পাওয়া যায় সেটি বড় পাওনা।

বরাবরের মতোই এবারও বেশি বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ি ফুলের ঝাড়ু। ঘর ঝাড়ু দেওয়ার জন্য এক বছরের ফুলের ঝাড়ু জব্বারের বলীখেলার মেলা থেকেই সংগ্রহ করেন চট্টগ্রামের গৃহস্থরা। এক জোড়া ভালো বাঁধাইয়ের ফুলের ঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। নারকেল পাতার শলার ঝাড়ুও কিনছেন অনেকে।

মাটির তৈরি ব্যাংক, হাতি-ঘোড়া, ফুলের টব, আয়না, শোপিস, বিভিন্ন মনীষী ও দেব-দেবীর প্রতিকৃতি, বাসন-কোসন, জগ-গ্লাস, পেয়ালা, ফুলদানি বিক্রি হচ্ছে বেশ। কে সি দে রোড, লালদীঘির পেট্রোল পাম্প এলাকায় বসেছে মৃৎশিল্পীদের স্টলগুলো। মেলার প্রথম দুই দিন দাম বেশি হাঁকলেও শেষ দিকে এসে মাটির জিনিসপত্র অনেকটা পানির দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন দোকানিরা।

মেলায় মাটির জিনিষপত্র দেখছে এক শিশু। আবদুর রহিম নামের একজন দোকানি বলেন, এসব পণ্য যদি আবার ফেরত নিয়ে যেতে হয় তবে অনেক টাকা গাড়িভাড়া লাগবে। নাড়াচাড়া ও পরিবহনের সময় ভেঙে যাবে অনেক জিনিস। তাই লাভের আসা ছেড়ে পুঁজি উঠলেই ক্রেতাদের গছিয়ে দিচ্ছি।

হালিশহর থেকে মাটির জিনিসপত্র কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী রোকেয়া হক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছাদে বাগান করার জন্য কিছু মাটির টব কিনতে এসেছি। এত সুন্দর সুন্দর পোড়ামাটির জিনিস কোনটা ফেলে কোনটা কিনি বুঝছি না।

মেলায় গৃহস্থালি পণ্য কেনার ধুম।  ছবি: উজ্জ্বল ধরশুধু টব নয়, লালদীঘির উত্তর ও পূর্বপাড়ে মিলছে দুর্লভ সব গাছের চারা। আম্রপালি, হাড়িভাঙাসহ বিদেশি জাতের আম ঝুলছে চারাগাছে। বারোমাসি আমগাছের চারায় এসেছে মুকুল। জামরুল, লেবু, মাল্টা, বাতাবি লেবুসহ অনেক ফলের গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে। বেশি চাহিদা রকমারি ফুল, ওষুধি গাছের।

বকশিরহাট মোড়, লালদীঘির মোড় এলাকায় বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মুড়ি-মুড়কি ও মিষ্টান্নের দোকান। যেখানে মিলছে বাতাসা, গজা, বুট, চানাচুর, লাড্ডু, খই, তিলের খাজা, পিঠা, আমৃত্তি, নারকেলের চিড়া, চিড়াভাজা, নাড়ু ইত্যাদি। প্রতিকেজি ১০০-১৪০ টাকা।

মেলায় ফল-ফুলের গাছও মিলছে। ঐতিহ্যবাহী মাটির চাকার টমটম গাড়ি, প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা, বাঁশি, শিশুদের পোশাক, নারীর শাড়ি, ঢোল, একতারা, দেশি ফলমূল, গহনা, মাছ ধরার চাঁই, পলো, কৃষকের টুপি, গামছা, দা, বঁটি, ছুরি, মাছ ধরার টেঁটা, শিমুল তুলা বিক্রি হচ্ছে মেলায়।

অন্যবারের তুলনায় আসবাবপত্রের সরবরাহ কম এবার। সিনেমা প্যালেস এলাকায় কাঠের তৈরি খাট, শোকেস, ওয়ারড্রোব, সোফা ইত্যাদি স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।