বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ জানান ভুক্তভোগীর পুত্র শিক্ষক প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী।
লিখিত বক্তব্যে প্রণব রঞ্জন বলেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এর পরামর্শে ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) আনোয়ারা থানায় মামলা করেছিলাম।
আরও খবর>>
** ভিটে ছাড়লেন বৃদ্ধ নিরঞ্জন, নেপথ্যে সাত ভূমিদস্যু
কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ২০১৬ সালে আমাদের বাড়ির অনতিদূরে একটি পুকুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় মো. ফারুক নামের একজনকে আমমোক্তারনামা দেয়া হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশরা সেটি বহাল থাকার দাবি করলে আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তা বাতিলের আবেদন করি। এরপর ১০ এপ্রিল (বুধবার) আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে আমাদের ভিটেছাড়া করতে অস্ত্রের মহড়া দেয়। দলিলে বাবার টিপসই এবং সাক্ষী বানিয়ে আমার স্বাক্ষর নেয়। তারা আমার বোনের শ্লীলতাহানিও করেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আনোয়ারা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সালাউদ্দিন আহমদ ও দলিল লেখক মহিউদ্দিন সংবাদমাধ্যমে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন- তা মিথ্যা, প্রতারণাপূর্ণ ও বানোয়াট বলে দাবি করেন প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী।
আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ জানান, এ মামলার অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বলাকা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন বলেন, নিরঞ্জন পণ্ডিত আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি আনোয়ারা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ও পরে তৈলারদ্বীপ-বারখাইন উচ্চবিদ্যালয়ে আজীবন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে আনোয়ারার ওই বাড়ি ছিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঠিকানা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে দেশ হানাদার মুক্ত হবার পর থেকে সেটি হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আস্তানা। এই বাড়ি থেকে পুষ্পমাল্য বানিয়ে আমরা নিয়ে যেতাম শহীদ মিনারে। আমাদের এসব কর্মকাণ্ড দেখাশোনা করতেন স্বয়ং পণ্ডিত স্যার।
‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতির সংকটময় মুহুর্তে বাড়িটিতে বসেই আমরা ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা গোপনে প্রতিবাদ সভা করতাম। এই বাড়িতে বসেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গোপন কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিলাম। ভারত থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রেরিত লিফলেট গোপনে রাখা হয়েছিল নিরঞ্জন পণ্ডিতের বাড়িতে। সংকটময় পরিস্থিতিতে পণ্ডিত স্যার ও তার সন্তান প্রণব চক্রবর্তী আমাদেরকে বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ও আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহাসিক বাড়িটি আজ দখল হয়ে গেছে। মৃত্যু পথযাত্রী শিক্ষকের বাড়ি-ভিটে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে উদ্ধার করতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি চাই’।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড় বলেন, আমরা ভূমিমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়েছি। এই আশ্বাসের বাস্তবায়ন চাই, পরিবারটির প্রায় সাড়ে ৮ গন্ডা জমি দ্রুত উদ্ধার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তীর বোন রত্না চক্রবর্তী, কন্যা কান্তা চক্রবর্তী ও পাপিয়া চক্রবর্তী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, ঐক্য পরিষদ মহানগর এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ, অধ্যাপিকা বিজয়া লক্ষী দেবী, জেলা পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব, ঐক্য পরিষদ দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি অ্যাড. প্রদীপ কুমার চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. হরিপদ চক্রবর্তী, সাগর মিত্র, কল্লোল সেন, হরিপদ চৌধুরী বাবুল, তাপস দত্ত, রাজীব দাশ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
এসি/টিসি