ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বন্দরের জিসিবির ২ জেটিতে হবে ক্রুজ টার্মিনাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
বন্দরের জিসিবির ২ জেটিতে হবে ক্রুজ টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ

চট্টগ্রাম: সরকারের ডেল্টা প্ল্যান, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে পর্যটনকে জনপ্রিয় ও নৌপথে যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে ক্রুজ টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ২টি জেটিতে ২০২৫ সাল নাগাদ এ টার্মিনাল নির্মিত হবে।

এ ছাড়া সমুদ্র সম্পদের টেকসই ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ব্লু ইকোনমিকে সহযোগিতা দিতে মাইনিং পোর্ট ও ফিশ হারবার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।

>> আরও ৩টি টার্মিনাল হবে চট্টগ্রাম বন্দরে

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে ১৩২তম বন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ এসব স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন। প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল বন্দরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বন্দর দিবস উদযাপন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ‘গ্রিন পোর্ট’ ধারণা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে চট্টগ্রাম বন্দরও গ্রিন পোর্ট ধারণা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বন্দরের ইক্যুইপমেন্টগুলো ইউরোপীয় ইমিশন স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বন্দর জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজে শোর পাওয়ার সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছি। নতুন সব নির্মাণকাজে বিশেষ করে সব ইয়ার্ড ও জেটির ছাউনিতে সোলার প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ বন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল হাবে পরিণত করার স্বপ্নও সুদূর পরাহত নয়।

বন্দরের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রসারণের ফলে বর্তমানে ১০ লাখ বর্গমিটার ইয়ার্ডে ২০ ফুট দীর্ঘ ৫০ হাজার কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা হয়েছে আমাদের। এ অবকাঠামোতে বছরে ৪০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারবো। বে টার্মিনাল হলে কাস্টমসের কার্যক্রম সেখানে স্থানান্তর করা হবে। জাহাজের গড় অবস্থানকাল এক দিনে নেমে আসবে। সেখানে ৬ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধারণক্ষমতার টার্মিনাল থাকবে। তখন আমরা ৭০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারবো। আগামী সপ্তাহে বে টার্মিনাল প্রকল্পের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আশাকরি, ৩ মাসের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ইয়ার্ড-শেডগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় দিন রাত ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের ৭ দিন, বছরের ৩৬৫ দিন কাজ চলে। মূল কাজ শুরুর এক বছরের মধ্যে অপারেশন শুরু হবে। আশাকরি ২০২১ সালের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে।

তিনি বলেন, নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতি মন্থর হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৭৫১ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ১৯০৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অমিত সম্ভাবনার এদেশে এখন উন্নত দেশগুলো পুঁজি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই সামাল দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। বছরে ৪ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) ১৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পিসিটিতে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৩টি কনটেইনার জাহাজ এবং ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। ২০২০ সালের জুনে এ টার্মিনালে অপারেশন শুরু করা যাবে।

তিনি জানান, খাদ্যশস্য, ক্লিংকার, স্ক্র্র্যাপের আমদানি প্রতিবছর বাড়ছে। যুক্ত হচ্ছে পাথর, স্টিল শিট, স্টিল পাইপের মতো নতুন নতুন পণ্য। বেড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল ও পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পের পণ্যসামগ্রী আমদানি। তাই ভবিষ্যৎ চাহিদা সামনে রেখে পতেঙ্গার লালদিয়ায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পতেঙ্গার ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মাঝামাঝি লালদিয়া চরে এটি নির্মিত হবে। যেখানে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

২০১৮ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ৬টি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চলতি বছর আওর ৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। বর্তমানে ৩ হ্যাজ যুক্ত জাহাজ এনসিটিতে ভিড়লে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। সব মিলে কনটেইনার পরিবহনে গতিশীলতা বেড়েছে ৩০ শতাংশ। বন্দরের রাজস্ব বাড়ার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad