ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম: ইংরেজ শাসনামলে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করার মাধ্যমে যে বন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার এই বন্দরের ১৩২তম বর্ষপূর্তি ও বন্দর দিবস  বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ।

বন্দরের ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৮৬০ সালে কর্ণফুলি নদীর মোহনায় দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়।

১৮৮৮ সালে বন্দরে নির্মিত হয় দুটি মুরিং জেটি। ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে।
১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেলওয়ে সংযোগ স্থাপিত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দরের তালিকায় এই বন্দরের অবস্থান ৭০তম।

দেড়শ’ বছর আগের বন্দরের সঙ্গে বর্তমান বন্দরের পার্থক্য সহজেই ধরা পড়ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে যুক্ত ব্যবসায়ীদের চোখে।

অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর১৯৭৭ সালে এটি ছিল কন্টেইনার পোর্ট। বন্দরের জলসীমা ছিল ৫ নটিক্যাল মাইল আর স্থলসীমায় ছিল একটি কন্টেইনার টার্মিনাল। ২০১১ সালে আলফা, ব্রেভো এবং চার্লি নামে তিনটি অ্যাংকারেজে ভাগ করে বন্দরের জলসীমা বাড়ানো হয় ৭ নটিক্যাল মাইল। এরপর কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতাও বাড়ানো হয়।

গত বছর ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য চারটি স্বতন্ত্র টার্মিনাল নির্মাণ, ১০টি গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি বন্দরের জলসীমা ৫০ নটিক্যাল মাইল বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানের চেয়ে ১৩ গুণ বড় হবে, ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ। তার উদ্যোগে বন্দরের দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা এবং সেবার মান উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে টেকসই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বন্দরের মাত্র ৬০ শতাংশ সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি জাহাজ ও কার্গো হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে।

মাত্র ৬টি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে যাত্রা শুরু করা চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৮ সালে সর্বশেষ ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬টি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে সক্ষম হয়েছে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরজার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসাল্টিংয়ের গবেষণা বলছে, ২০৩৬ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ ৫৬ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে। প্রতি বছর বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, কর্ণফুলীর মোহনায় বে টার্মিনাল, পতেঙ্গায় কন্টেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কন্টেইনার জট কমাতে ৩৭ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড। সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ডে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নিলামকৃত পণ্যের কন্টেইনার। সীতাকুণ্ড এলাকায় আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে। বন্দরে বর্তমানে ১০টি গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে চলছে কন্টেইনার ওঠা-নামার কাজ।

বন্দরের অর্থায়নে ২৬ একর জায়গার ওপর এক হাজার আটশ’৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এখানে জাহাজ ভিড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় তৈরি হচ্ছে ৬০০ মিটার জেটি। সেখানে একইসঙ্গে ভিড়তে পারবে ৩টি কন্টেইনার জাহাজ। নির্মাণ করা হচ্ছে ২২০ মিটার ডলফিন জেটি, যেটিতে খালাস করা হবে ভোজ্য তেল। পতেঙ্গা টার্মিনালে বছরে সাড়ে ৪ লাখ টিইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন কন্টেইনার জেটি, ডলফিন জেটি, ফ্লাইওভার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ চলছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, রিচ স্ট্যাকার, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি, রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ করা হবে।

অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরএছাড়া লালদিয়ার চরে ৮২০ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটি এবং ৫৮ একর এলাকা নিয়ে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের মধ্যবর্তী স্থানে নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করতে ডেনিশ প্রতিষ্ঠান রেম্বল গ্রুপের সঙ্গে গত ৪ জানুয়ারি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

লাইটারেজ জাহাজ থেকে নদীপথে পণ্য আনা-নেওয়ার কার্যক্রম সহজ করতে বন্দরের বহির্নোঙরে একটি ফ্লোটিং হারবার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্দরকে পরিবেশবান্ধব করতে গ্রিন পোর্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, ক্রমবর্ধমান চাহিদা, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বৃদ্ধির কারণে এই সমুদ্র বন্দরের জলসীমা আবারও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। জলসীমা পতেঙ্গা উপকূলের উত্তরে কাট্টলী থেকে সীতাকুণ্ড এবং দক্ষিণে আনোয়ারার গহিরা থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে।

এদিকে সক্ষমতা বাড়ায় সাম্প্রতিক সময়ে জাহাজ হ্যান্ডলিং এবং কনটেইনার ও খোলা পণ্য খালাসে রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এতে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে অনেক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।