ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রূপচর্চায় রূপ নাশ

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
রূপচর্চায় রূপ নাশ ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: নগরে গড়ে ওঠা বেশকিছু বিউটি পার্লার চলছে শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে। অনেক প্রতিষ্ঠানের সেটিও নেই। অলি-গলির বাসা ভাড়া নিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক পার্লারে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনীতে চলছে রূপচর্চার নামে বাণিজ্য।

মেহেদীবাগের লুসি বিউটি পার্লার রয়েছে রূপ সচেতন নারীদের পছন্দের তালিকায়। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ কসমেটিকস ব্যবহারের দায়ে এবং প্রতিশ্রুত সেবা না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের মালিককে দিতে হয় এক লাখ টাকা জরিমানা।

জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া মুন ওই পার্লারে অভিযান চালানোর সময় ফ্যাসিয়াল কক্ষে পাওয়া যায় অনেক রকমের লেভেলবিহীন ক্রীম, মেয়াদোত্তীর্ণ লিপস্টিক, আইশ্যাডো, নেইল পলিশ, শ্যাম্পুসহ বিএসটিআই এর অনুমোদনহীন বিভিন্ন পণ্য।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে বিউটি পার্লারগুলোতে অভিযান চালায়, তবে এ সংখ্যা খুব নগণ্য।

সম্প্রতি ‘মেক আপ আর্ট বাই রাজু’, ‘টাচ অ্যান্ড গ্লো’, ‘কিউট হারবাল’, ‘উইমেন্স গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড’, ‘সোহেলি বিউটি’, ‘ফেয়ার লেডি’ বিউটি পার্লার এবং সোমবার (১৫ এপ্রিল) ই‌পি‌জেড থানাধীন তানিছা বিউ‌টি পার্লার‌ ও স্মার্ট বিউটি পার্লার মালিককে মেয়াদোত্তীর্ণ কসমেটিকস ব্যবহার করায় জরিমানা ক‌রা হয়।

ফাইল ফটোপাঁচলাইশ থানার কাছাকাছি লিয়ানা বিউটি পার্লারে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন একজন সাংবাদিক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অভ্যর্থনা কক্ষে এক যুবক ফুলদানিতে ফুল সাজাতে ব্যস্ত ছিল। তার পাশে দরজায় ‘শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য’ লেখা থাকলেও দরজাটি ছিল খোলা। আর ভেতর থেকে ভেসে আসছিল পুরুষের কণ্ঠস্বর। কৌতুহলী হয়ে ভেতরে উঁকি দিতেই দেখা গেল বোরকা পরিহিত কয়েকজন নারী পরিবেষ্টিত এক ব্যক্তি আলাপে ব্যস্ত। অভ্যর্থনা কক্ষের সেই ছেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার সময় ভেতর থেকে মালিক দাবিদার এক লোক বেরিয়ে আসেন। নারীদের পার্লারে তিনি কি করছিলেন-তার জবাব না দিয়ে উল্টো অসৌজন্যমূলক আচরণ করলেন।

অভিযোগ আছে, কিছু পার্লারে রূপচর্চার আড়ালে অনৈতিক কাজও চলে। পার্বত্য এলাকার নারীদের বিউটিশিয়ান সাজিয়ে ম্যাসেজ পার্লারের নামে চলে পতিতাবৃত্তি। প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে দিনের পর দিন চলছে এ বাণিজ্য।

জানা যায়, পারসোনা, হাব্বিস আলভিরাস, কেসবাক, ইভস, নির্ভানা’র মতো প্রথম সারির পার্লারগুলোতে ফেসিয়ালের জন্য দিতে হয় ৭শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা, পুরো শরীর ম্যাসেজের জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর ক্যাটালগ দেখে মেহেদি আঁকাতে খরচ হয়  দেড়শ’ থেকে তিন হাজার টাকা। হেয়ার কাটের জন্য খরচ পড়ে ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। তবে ডে ড্রীম, মিরর বিউটি কেয়ার, অর্কিড, লাক্সারি, মামস্, রোমা, অপ্সরী, ফেয়ার টাচ, ল্যাকমি, অ্যারোমা, ফিগারিনা, রোমি বিউটি পার্লারে খরচ একটু কম।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফিল্ড অফিসার (সিএম) শিমু বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, কসমেটিকস সহ ১৮১টি পণ্য আছে, যেগুলোর বিএসটিআই’র লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। অনেক পার্লারে অভিযানে শ্যাম্পু, ফেইস পাউডার, লিপস্টিক সহ নানান কসমেটিকস পাওয়া যায়, যেগুলোতে বিএসটিআই এর কোনো লোগো কিংবা আমদানীকৃত দেশের নাম, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকে না।

কয়েকটি অভিজাত পার্লারে অভিযানে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটরা দেখেছেন, কসমেটিকসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে পাঁচ-ছয় বছর আগে। তবুও ব্যবহার করা হচ্ছে এসব প্রসাধনী।  নষ্ট হয়ে যাওয়া হারবাল সামগ্রী ফ্রিজে সংরক্ষণের পাশাপাশি মাছ-মাংসও রাখা হয়েছে।

ফাইল ফটোচিকিৎসকরা বলছেন, এসব প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের কারণে ত্বক ও চুল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে চর্মরোগ; হতে পারে ক্যান্সারও। লিপস্টিকে ক্ষতিকারক উপাদান সীসা, ক্যাডমিয়াম, পারদ, অ্যান্টিমনি, ফর্মালডিহাইড, কার্সিনোজেন, মিনারেল অয়েল ও পেট্রোকেমিক্যালস্ থাকে, যা রোমকূপ বন্ধ করে দেয়।

‘মানহীন কসমেটিকস ব্যবহার করে ফ্রুট ফেসিয়াল, অরেঞ্জ, অ্যালোভেরা, ভেজ-পিল, হোয়াইটেনিং ফেসিয়াল, লংস্লাইড, লেজার, লেয়ার, মাল্টিপল লেয়ার করাও ক্ষতিকর। দাঁত সাদা করতে যেসব বিউটিশিয়ান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করছে, তাদের কারোরই নেই কোন প্রশিক্ষণ কিংবা এই রাসায়নিক ব্যবহারের অনুমোদন। এতে দাঁত পড়ে যাওয়া, নষ্ট হওয়া এবং মাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে’।

হালিশহর মুনির নগর এলাকার গৃহবধূ ফারজানা শারমীন প্রতিমাসে বিউটি পার্লারে যেতেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভ্রু প্লাক ও মেকআপ করাতেন প্রায়ই। একসময় তার মুখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়, দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অগত্যা তাকে যেতে হয়েছে চর্মরোগ চিকিৎসকের কাছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, কিছু পার্লারে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনে সাজানো হচ্ছে নারীদের, যা অনেক গ্রাহকই জানেন না। ফলে রূপচর্চায় রূপ নাশই হচ্ছে। অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী সামগ্রী পাওয়া গেলে জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করে দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।