ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বর্ষায় আবারও ডুবছে বন্দরনগরী!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
বর্ষায় আবারও ডুবছে বন্দরনগরী! ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় আসন্ন বর্ষায় আবারও ডুবতে চলেছে বন্দরনগরী।

দীর্ঘদিন ধরে খাল-ছড়া ও সংযুক্ত নালা-নর্দমাগুলো বেদখল, ভরাট ও দূষণের কারণে প্রতিবছর বর্ষায় তলিয়ে যেতো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ শহর।

তবে গত বছর ২৮ এপ্রিল জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ শুরুর পর নগরবাসীর আশা ছিল, জলাবদ্ধতা থেকে তাদের মুক্তি মিলবে।

কিন্তু দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় বর্ষায় আবারও জলাবদ্ধতা নিয়ে আতঙ্কে আছেন তারা।

খোদ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএ বলছে, মেগা প্রকল্পের কাজ আশানুযায়ী অগ্রগতি হয়নি।

তবে জলাবদ্ধতা ঠেকাতে নগরের ৪১ ওয়ার্ডকে চারটি জোনে ভাগ করে সিডিএ ইতিমধ্যে অন গ্রাউন্ড অ্যাসেসমেন্ট করে কাজ পরিচালনার জন্য দল গঠন করেছে।

সামান্য বৃষ্টিতে নগরের আগ্রাবাদ, হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলী, চান্দগাঁও, মোহরা, কালুরঘাট, ষোলশহর, শোলকবহর, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, মুরাদপুর, চকবাজার, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, প্রবর্তকসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিতে ডুবে যায়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয় নগরবাসীর। পানিতে প্রতিবছর গুদাম-আড়ত, দোকানপাটে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

সম্প্রতি সিডিএতে অনুষ্ঠিত এক সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মেগা প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।

গণপূর্ত মন্ত্রী বলেছেন, সিডিএকে কাজের গতি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রতিকূলতা থাকলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়া হবে।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের অধীন ৩৬টি খালের মাটি অপসারণ ও খনন, ৫টি টাইডাল রেগুলেটর, ১২টি পাম্প হাউস স্থাপন, ৬টি আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ, প্রায় ২০০টি ক্রস ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ, ১৫ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেনের সম্প্রসারণ, পানি সংরক্ষণে ৩টি জলাধার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাংলানিউজকে বলেন, মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগামী কয়েক দশক চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্ঠি হবে না।

‘তবে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামের ৫৭টি খাল বিদ্যামান। সেখান থেকে ৩৬টি খাল প্রকল্পে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে বাকী খালগুলো প্রকল্পের আওতায় আসবে। সেজন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হবে।

সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু বৃহৎ প্রকল্প, তাই কাজ শেষ হতে সময়ও বেশি লাগবে। তিন বছরে এ প্রকল্পে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।

‘ইতোমধ্যে ১৩টি খাল চিহ্নিত করে ডিটেইল ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এ কাজ খুব জটিল ছিল। ডিটেইল ডিজাইনের মাধ্যমে ওইসব খালের এরিয়াতে কি পরিমাণ বৃষ্টি হতে পারে, ২০০ বছর পর কি পরিমাণ বৃষ্টি হবে, সেটি বের করে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এবং গভীরতা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ’

প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মহেষখালের মুখে টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ১৩টি খালের ডিটেইল ডিজাইন তৈরির কাজ শেষ। এ ছাড়া ১৮টি কালভার্ট নির্মাণ শিগগির শুরু হবে।

তিনি বলেন, ১৩টি খালের ডিটেইল ডিজাইন তৈরি করতে করতে বর্ষা চলে আসায় ডিজাইনের কাজ বাদ দিয়ে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের আওতায় খালগুলোর আবর্জনা পরিস্কার করা হবে। ফলে পূর্বের মতো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। ’

আহমদ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা ঠেকাতে নগরের ৪১ ওয়ার্ডকে চারটি জোনে ভাগ করে কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), সিডিএ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর একটি দল বৈঠক করেছে। ’

অন্যদিকে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত রাখতে ৪১টি ওয়ার্ডে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে চসিক।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৯
এসইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।