সংশ্লিষ্টরা বলছেন- নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মা মাছ সংরক্ষণ, ডিম থেকে রেণু তৈরির কুয়া সংস্কার, কুয়ায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগের কারণে হালদায় ডিম সংগ্রহের পরিমাণ এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, হালদা থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান ২০১৮ সালে বেশি ডিম সংগ্রহের তথ্য দিলেও ডিম সংগ্রহকারীরা বলছেন- সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলের ১৭ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে ভরা পূর্ণিমার সময় ডিম সংগ্রহের এ পরিসংখ্যানে এবার নতুন রেকর্ড যুক্ত হবে।
হালদা থেকে দীর্ঘদিন ডিম সংগ্রহ করেন কামাল সাওদাগর।
কামাল সাওদাগর বলেন, এবার হালদার মা মাছ রক্ষায় গত কয়েক মাসে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। মাছের ডিম থেকে রেণু তৈরির কুয়াগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলেদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার রেকর্ড ডিম সংগ্রহে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, এ বছর ডিম সংগ্রহ করতে প্রায় ৩০০টি নৌকা প্রস্তুত করা হয়েছে। জাল দিয়ে নদী থেকে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ৫০০ জেলে। মা মাছ ডিম ছাড়লে প্রথমে নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে কুয়ায় নেওয়া হবে। সেখানে ডিম থেকে রেণু তৈরির পর রেণুগুলো পুকুরে দিয়ে পোনা তৈরি করা হবে। এরপর তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হবে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ কারণে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরেই হালদাকে গুরুত্ব দিয়ে নানা উদ্যোগ নিই।
তিনি বলেন, ডিম সংগ্রহকারীরা যাতে ভালো ডিম সংগ্রহ করতে পারেন এ জন্য মা মাছ সংরক্ষণের উপর জোর দিই। ইঞ্জিন চালিত নৌকা জব্দ, নিষিদ্ধ জাল ধ্বংসসহ হালদার দূষণ কমাতে নিয়মিত অভিযান চালাই। ডিম থেকে রেণু তৈরির কুয়াগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিই। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করি।
এক প্রশ্নের উত্তরে মো. রুহুল আমিন বলেন, মাছুয়া ঝর্ণা, শাহ মাদারি এবং মদুনা ঘাটসহ ৩টি হ্যাচারির ১০৮টি কংক্রিট ও ১০টি প্লাস্টিকের কুয়ায় হালদার ডিম সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিলো। তবে প্রায় ৫ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে এসব কুয়ার ৪৫টি নষ্ট হয়ে যায়। গত কয়েক সপ্তাহে নষ্ট হওয়া কুয়াগুলো সংস্কার করেছি আমরা। জেলেদের বলেছি- প্রয়োজন হলে আরও কুয়া তৈরি করে দেবে উপজেলা প্রশাসন। হালদায় জেলেদের ডিম সংগ্রহে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে চাই আমরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত এপ্রিলে অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমায় প্রবল বর্ষণ আর মেঘের গর্জনের সঙ্গে পাহাড়ি ঢল নামলেই হালদায় ডিম ছাড়া শুরু করে রুই জাতীয় কার্প মাছ। এবার ৩ থেকে ৯ এপ্রিল অমাবস্যার সময় পাহাড়ি ঢল কম থাকায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ। তবে ১৭ থেকে ২১ এপ্রিল পূর্ণিমার সময় ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে রুই জাতীয় কার্প মাছের ডিম সংগ্রহের ক্ষেত্রে হালদা বিশ্বে একমাত্র নদী। এ নদীতে বিশাল বিশাল মা-মাছগুলো ডিম ছাড়ে। সেই ডিম নিজস্ব কৌশল, অভিজ্ঞতায় স্থানীয় জেলেরা সংগ্রহ করে এবং মাটির বড় বড় গর্তে পানি দিয়ে ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করে। সেই রেণু ছোট ছোট পুকুরে ছেড়ে দিলে পোনা হয়।
ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, প্রতি কেজি রেণুতে চার-পাঁচ লাখ পোনা জন্মায়। তখন চেনা যায় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ মাছের পোনাগুলো। হালদার ডিম থেকে সৃষ্ট পোনা সহজে বড় হয় বলে সারা দেশের মৎস্যচাষিদের প্রথম পছন্দ। দামও হ্যাচারির কৃত্রিম পোনার চেয়ে অনেক বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
এমআর/টিসি