ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হ্যালো, আপনার সন্তান অসুস্থ…

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৯
হ্যালো, আপনার সন্তান অসুস্থ… প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: বিকাল ৪টায় অচেনা নম্বর থেকে মো. হাশেমের মুঠোফোনে আসা কল রিসিভ করার পর বলা হলো- ‘হ্যালো, ভাই আপনার সন্তান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। ডাক্তাররা কিছু ওষুধ তাড়াতাড়ি কিনতে বললো। এই বিকাশ নাম্বারে ৩ হাজার টাকা পাঠান’। 

আসকার দিঘীর পাড় এলাকার মুদি দোকানী হাশেমের মেয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২২ মার্চ এ ঘটনায় বিচলিত হয়ে তিনি ফোনটা কেটে মেয়ের মোবাইলে কল দিলেন।

মেয়ে জানালেন, তিনি হলে ঘুমাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর কর্মকর্তা এ কে এম সালাউদ্দীনকে ১৪ মার্চ দুপুরে ফোন করে বলা হয়, তার ছেলে আশরাফুল মাকবুল সাকিকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে নিজেদের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

দ্রুত টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় অপরিচিত কণ্ঠ। বিশ্বাস জন্মানোর জন্য ছেলের মতো কণ্ঠের এক শিশুর সঙ্গেও কথা বলিয়ে দেয়া হয় প্রায় ৩০ সেকেন্ড। চসিক মেয়রের পরামর্শে বিষয়টি জানানো হয় কোতোয়ালী থানায়। কিন্তু ততক্ষণে সেই মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ফোনটি ময়মনসিংহ থেকে এসেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পারে পুলিশ।

একেএম সালাউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ছেলেকে আটকে রাখার খবর পেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত স্কুলে গিয়ে জানতে পারি-ছেলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস করছে।

শুধু মো. হাশেম কিংবা সালাউদ্দীন নন, সম্প্রতি এ ধরণের ফোন পেয়েছেন সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র অর্ণব বণিকের বাবা মধু চন্দ্র বণিক, সিঅ্যান্ডবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ত্রিদেব বিশ্বাসের বাবা সুমন বিশ্বাস, মুসলিম হাইস্কুলের রাব্বির বাবা আবদুল কাইয়ুম, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা আর কে দাশ সহ বেশ ক’জন।

জানা গেছে, সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র এভাবেই অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের বাবার বন্ধু সেজে নাম্বার হারিয়ে গেছে জানিয়ে কৌশলে তা সংগ্রহ করছে তারা। এজন্য শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসার সময়টা বেছে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে যোগাযোগের নম্বর, রাস্তার পাশে গজিয়ে ওঠা দোকানগুলোতে মোবাইলে টাকা নেয়া, সিম নিবন্ধন ও বিল পরিশোধের সময় গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত মুঠোফোন নম্বর সহ নানান তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যাচ্ছে প্রতারকরা।

নগরের ১৬টি থানায় প্রায় এ ধরনের অভিযোগ আসছে। তবে সঠিক তথ্য-প্রমাণের অভাবে প্রতারকদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আবার অনেক অভিভাবক পুলিশকে না জানিয়ে এ ফাঁদে পড়ছে, সন্তানের কথা ভেবে দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে।

ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিভাবক জানান, সন্তান রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছে, কিংবা তাকে আটকে রাখার খবর দিয়ে তাড়াতাড়ি বিকাশে টাকা পাঠাতে বলে প্রতারকরা। বাবার বন্ধু পরিচয়ে মুসলিম হাইস্কুলের শিক্ষার্থী রাব্বির সঙ্গে কথা বলার ছলে এক প্রতারক তার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে বাসায় ফোন করে টাকা দাবির ঘটনাও ঘটেছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগরে এ ধরনের কয়েকটি চক্র সক্রিয় আছে। এ চক্রের ৩ সদস্যকে মাসখানেক পূর্বে গ্রেফতার করার পর তারা জানিয়েছিল, ভুয়া নিবন্ধন করা সিম দিয়ে ফোন করে টাকা দাবি করা হয়। স্কুল শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে তারা কৌশলে অভিভাবকের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে। ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বন্ধু তালিকায় থাকা সবার কাছে টাকার জন্য অনুরোধও পাঠায় তারা।  রিয়াজউদ্দীন বাজারে অভিযান চালিয়ে শুধু একটি দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৫শ’ সিম, যা বিভিন্নজনের নামে নিবন্ধিত।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বাংলানিউজকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। তবে প্রতারকরা চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে ফোন করে এভাবে টাকা দাবি করছে। এই চক্রের সঙ্গে এখানকার কিছু প্রতারকও জড়িত থাকতে পারে, যারা বিভিন্ন উপায়ে অভিভাবকদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করছে। প্রযুক্তির সহায়তায় এই প্রতারকদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৯
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।