ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধুকে দেখে দিনের কাজ শুরু করি: চবি উপাচার্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৯
বঙ্গবন্ধুকে দেখে দিনের কাজ শুরু করি: চবি উপাচার্য বক্তব্য দেন প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখে দৈনিক কাজ শুরু করেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, এক সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির জনককে স্মরণ করা বিশাল অপরাধ মনে করা হতো। এই ক্যাম্পাসে জাতির জনকের কোনো স্মৃতি ছিলো না।

কিন্তু উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মধ্যেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল করেছি।

চবি উপাচার্য বলেন, এখন প্রতিদিন অফিসে ঢুকার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখি।

আমাদের শিক্ষক-কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুকে দেখেই দিনের কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখার অর্থ হলো- তার আদর্শের কথা স্মরণ করা, তাকে বুকের মধ্যে ধারন করা।

সোমবার (১৮ মার্চ) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্য হারাম করেছি:

প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পরেই অনুষ্ঠান করে সবাইকে ডেকে বলেছি- আজ থেকে আমার জন্য উপাচার্যের এ টেবিল জায়নামাজ। সেদিনই শপথ নিয়েছি- উপাচার্যের টেবিলে থেকে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, কোনো ধরনের টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্য আমার জন্য হারাম। আজ পর্যন্ত সেই শপথ বজাই রেখেছি।

কারও চাপে মাথা নত করবো না:

চবি উপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দল-উপদল আছে। তাদের দ্বারা অনেক সময় সাংবাদিকরা আক্রান্ত হয়। তাদের গাড়ি আক্রান্ত হয়। ক্যামেরা আক্রান্ত হয়। কিন্তু এসব ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিই। কারও রক্তচক্ষু কিংবা কারও চাপে গত ৪ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মাথা নত করেনি। ভবিষ্যতেও মাথা নত করবে না।

আপোষের মাধ্যমে ৪টি হল ছেড়ে দেয়া হয়:

প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এক সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের কিংবা শিক্ষার চাষাবাদ হতো না। রগকাটার-মানুষকাটার চাষাবাদ হতো। ৩ বছর ৯ মাস আগে আমি যখন দায়িত্ব নিচ্ছিলাম, তার কিছু দিন আগেও ৪টি হল আপোষের মাধ্যমে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে ছেড়ে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পরে দেখলাম- এই অপশক্তিকে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব নয়। ক্যাম্পাসে শিক্ষার মান ধরে রাখার আশাও আমরা করতে পারি না। তবে এ জন্য আমরা সহিংসতা কিংবা বর্বরতার আশ্রয় নিতে যাইনি। আলোর শক্তিকে প্রণোদনা দিয়েছি। আলোর শক্তিকে উৎসাহিত করেছি। এ কঠিন কাজ সম্ভব হয়েছে সাংবাদিকরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন বলে।

নিরপেক্ষ নয়, সত্যের সঙ্গে থাকতে হবে:

চবি উপাচার্য বলেন, মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য অন্ধকারের শক্তিকে নিধন করে আলোর পথ প্রদর্শনের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিকরা। তারাই আমাদের সমাজের যত অসঙ্গতি-বিচ্যুতি আছে- তা জনগণের কাছে, দেশের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে সংশোধনের উদ্দেশে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, তবে এ কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সবার আগে নিজেকেই ডিসকভার করতে হবে। আত্মসমালোচনা করতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে হবে। নিরপেক্ষ নয়, সত্যের পক্ষে থাকতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে চবি উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আক্তার বলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিকে নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ‘ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট‘ আয়োজনের যে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যার কথা তাদের লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরছে। আমরা সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিচ্ছি।

চবি উপ-উপাচার্য বলেন, এখন দেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক সময়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা। আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে ভালো ভালো জায়গায় দেখলে আমাদের ভালো লাগে। আমরা খুশি হই। আশা করবো- এখানে যারা নবীন তোমরাও অগ্রজদের পথ ধরবে। পড়াশোনা করবে। একদিন অনেক বড় হবে। ঠিক যতটুকু বড় হওয়া যায়।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একই প্রতিবেদককে রাজনীতি, অপরাধ, ফিচারসহ নানা বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। তবে এ অভিজ্ঞতা ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলে। তারা মাল্টিট্যালেন্টেড হয়।

তিনি বলেন, আগামী দিনের সাংবাদিকতায় একজন ব্যাক্তিকে একই সঙ্গে প্রতিবেদন তৈরি, ছবি তোলা, ভিডিও ধারন এবং এডিটিং এর কাজ করতে হবে। তাই সাংবাদিকতায় ভালো করতে হলে নিজেকে সব ক্ষেত্রেই পারদর্শী করে গড়ে তুলতে হবে। নতুন নতুন ধারনার সঙ্গে জনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। তবেই সফল এবং স্বপ্নজয়ী হওয়া যাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ বাইজিদ ইমনের সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জোবায়ের চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রক্টর অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মিলন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট উপলক্ষে বিশেষ স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। সন্ধ্যায় নিজেদের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করে ব্যন্ড দল শিরোনামহীন।

এর আগে সকালে ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। দুই দিনব্যাপী এ উৎসবে ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭টি সংগঠনের দুইশরও বেশি সাংবাদিক অংশ নিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad