ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ইঞ্জিন সংকটে কমেছে রেলের আয়  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৯
ইঞ্জিন সংকটে কমেছে রেলের আয়   রেলের পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে চলছে পণ্য পরিবহন।

চট্টগ্রাম: রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে দুই হাজার সিরিজের ইঞ্জিন ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পাকিস্তান আমলের শুরুর দিকে যুক্ত হয়েছিল। পাকিস্তান আমল শেষ, নতুন বাংলাদেশ হয়ে এর বয়স হতে চললো ৪৮ বছর। কিন্তু এখনও সেই পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে চলছে পণ্য পরিবহন।

ফলে ইঞ্জিন সংকটের কারণে গ্রাহককে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ দিতে না পারায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রতি মাসে আয় কমেছে প্রায় এক কোটি ৭৭ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, একটি ইঞ্জিনের ইকোনমিক লাইফ বা কার্যক্ষমতা থাকে ২০ বছর।

পূর্বাঞ্চলে যে ৬টি ২০০০ সিরিজের ইঞ্জিন আছে সেগুলোর মেয়াদ চলে গেছে সেই ১৯৭১-৭৩ সালের দিকে। কিন্তু এরপরও ৪৮ বছর ধরে চলছে এসব ইঞ্জিন।
মেরামত করে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে ইঞ্জিনগুলো। বলা যায় একপ্রকার জোর করেই কাজ চালানো হচ্ছে।

ফলে যেখানে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার চলার কথা, সেখানে এসব ইঞ্জিন দিয়ে চলছে মাত্র ২০ কিলোমিটার। চলন্ত অবস্থায় প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ছে ইঞ্জিনগুলো। একটু চললেই ইঞ্জিন গরম হয়ে যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে পণ্য পরিবহনের ট্রেন চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ রেলওয়ের পরিবহন ব্যবস্থায় সবচেয়ে লাভজনক হলো পণ্য পরিবহন ট্রেন।  

সূত্র জানায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে তেলবাহী ট্যাংকের জন্য দুটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চাহিদা ছিলো ২১টি ট্রিপ। প্রতি ট্রিপের জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলো। কিন্তু ইঞ্জিন সংকটের কারণে তেল দিতে না পারায় মাসে আয় কমেছে ৯৪ লাখ ৫০ হাজার।

এছাড়া সিলেট, শ্রীমঙ্গল, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, রংপুরসহ কিছু কিছু জায়গায় তেল সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এরমধ্যেও সিলেটে ১৬টি ট্রিপের চাহিদার বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে ১০ ট্রিপ। যেখানে প্রতি ট্রিপ তেল সরবরাহের জন্য ৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা রেলওয়ে আয় করলেও ইঞ্জিন সংকটের কারণে বাকি ৬ ট্রিপ দিতে না পারায় প্রতি মাসে আয় কমেছে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা।

...রংপুরে চাহিদা রয়েছে ১০ ট্রিপ। কিন্তু সেখানেও ইঞ্জিন সংকটের কারণে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ৪ ট্রিপ। প্রতি ট্রিপ সরবরাহের জন্য সাড়ে ৯ লাখ টাকা আয় হলেও বাকি ৬ ট্রিপ দিতে না পারায় আয় কমেছে ৫৭ লাখ টাকা।

এছাড়া বন্দর থেকে সরকারি গম এই রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। কিন্তু ইঞ্জিন সংকটের কারণে ৫ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ৪ হাজার টন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে ২০০০ সিরিজের যে ইঞ্জিন গুডস ট্রেনে ব্যবহার করা হয় সেগুলো একেবারে বাদ দিতে হবে। ২৯০০ বা ২৬০০ সিরিজের ইঞ্জিন এখানে প্রয়োজন। এই মানের ইঞ্জিন যুক্ত করা হলে বা ইঞ্জিন সংকট মিটলে রেলওয়ের আয় আরও কয়েক কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।

ইঞ্জিন সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ ফারুক আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ইঞ্জিন সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ইতোমধ্যে সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে।

ইঞ্জিন কেনার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি তহবিলে এতো টাকা নেই। এডিবি এরইমধ্যে এগিয়ে এসেছে। ৭০টি ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে। এগুলো যুক্ত হলে এ সংকট আর থাকবে না। '

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৯
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।