ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘আমদানিকারকই মিথ্যা ঘোষণার কথা স্বীকার করছেন’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৯
‘আমদানিকারকই মিথ্যা ঘোষণার কথা স্বীকার করছেন’ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: নজরদারি বাড়ানোর কারণে অনেক আমদানিকারক নিজেরাই মিথ্যা ঘোষণা ও ভুল এইচএস কোডে আনা চালানের কথা স্বীকার করছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নতুন কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান।

সোমবার (৪ মার্চ) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে এ তথ্য জানান দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের এ শীর্ষ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, আমাদের নজরদারির কারণে ইতিমধ্যে একটি জিনিস হয়েছে, অনেক আমদানিকারক নিজেরা মিথ্যা ঘোষণার চালানের কথা স্বীকার করছেন।

কেউ আবার ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্টে (আইজিএম) ৫ টন ঘোষণা দিয়েছিল। এখন আবার ১৫-২০ টন করছে।
যদি আগের নিয়মে হতো তবে ৫ টনের ঘোষণায় ১৫-২০ টন নিয়ে যেত। এখন কাস্টম কর্মকর্তারা নজরদারি বাড়ানোর কারণে বন্দর থেকে চালান নিয়ে যেতে পারছে না।

স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। যেসব আইটেম ও সেক্টরে বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে সেগুলোর ওপর নজরদারি বাড়িয়েছি। কিছু পণ্য আছে বছরে খুব সামান্য আমদানি হয়। আবার ফেব্রিক্স, স্টিলশিট, টাইলস, স্ক্র্যাপ, চকলেট, গ্লাস, কসমেটিকস ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে আমদানি হয়। এ রকম ৮০০ কনটেইনার আটকে আছে বন্দরে। যাচাই-বাছাইয়ের পর ১০০-১৫০টি কনটেইনার ছাড়পত্র নিয়েছে। আটকে পড়া ৫০টি কনটেইনার কসমেটিকসের। অনেক আমদানিকারক বিপদে আছেন, কারণ পণ্যের মেয়াদ চলে যাওয়ার শঙ্কা আছে। অনেক তথ্য পাচ্ছি। উড়োচিঠি পাচ্ছি। তদন্ত করছি।

তিনি বলেন, নিয়মিত রুটিন কাজের অংশ হিসেবে কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ বদলি একবার করেছি। শিগগির আবার বড় ধরনের বদলি করা হবে। আমি তো তাদের ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। আমি চাই সবাই আন্তরিকভাবে, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করুক।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাস্টম হাউস শুধু রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছে না। একই সঙ্গে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, ব্যবসায়ীদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানো, বিনিয়োগ বাড়ানো, রফতানি বাড়ানো, উন্নয়ন প্রকল্পের পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাড়করণ, অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেন স্বাভাবিক রাখা, চোরাচালান, মানবপাচার, মাদক ও অস্ত্রপাচার প্রতিরোধসহ নানা বিষয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে রাজস্ব আয় কিছুটা কমেছিল। এখন আমদানি ও রাজস্ব দুটোই বাড়বে। লক্ষ্যমাত্রা কমার অনেক কারণ আছে। যেমন আগের বছর যেখানে ৬ হাজার গাড়ি এসেছিল, এ বছর এসেছে ৩ হাজার। এ খাতে ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মোংলা বন্দরেও গাড়ি আমদানি কমেছে প্রায় ২ হাজার। শতভাগ রফতানি পণ্যের প্রচুর কাঁচামাল আসে বন্ড সুবিধায়। সেখানে রাজস্ব নেই। রাজস্ব আদায়ের বড় খাত পেট্রোলিয়াম আমদানি বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। আমার লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি তো ৪০ শতাংশ। ভোজ্যতেলের আমদানি বাড়েনি। আবার বিশ্লেষণ করে দেখছি।

তিনি বলেন, মিথ্যা ঘোষণা, পণ্যের ভুল পরিচিতি নম্বরে (এইচএস কোড) স্টিলশিট বা নানা পুরুত্বের প্লেট আমদানি করায় ১ মাসে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছি। প্লেটের আইটেমে সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেছি। এ খাতে বেশি রাজস্ব আদায় হচ্ছে প্রায় ৬ কোটি টাকা।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সার্ভারের সমস্যা ঝুঁকিপূর্ণ। ভালনারেবল কন্ডিশনে আছি। আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। আমাদের রাসায়নিকের নমুনাগুলো বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ডেকেছি। যার যার নমুনা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। শিগগির আমরা একটি কর্মসূচি হাতে নেব, এগুলো শনাক্ত করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে চিঠি দিয়ে দেবো নিয়ে যাওয়ার জন্য।

জনবল সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার সহকারী কমিশনার, উপ কমিশনার থাকার কথা ৬৫ জন, আছেন ৩২। ৪ জন সহকারী কমিশনারকে দেখতে হচ্ছে ২১টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো। একেকটি ডিপো আবার একেক জায়গায়।

চট্টগ্রাম বন্দরে ২টি স্ক্যানার যোগ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্দরে বর্তমানে ৪টি স্ক্যানার আছে। এর মধ্যে একটি নষ্ট। দুইটি নতুন স্ক্যানার আসছে। সক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি সারা দেশে কতটি স্ক্যানার প্রয়োজন তা নির্ধারণের লক্ষ্যে কাজ করছে।

কাস্টম হাউসের নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, আমরা চাইছি বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনায় কাস্টম হাউস, পরীক্ষাগার ভবন, আবাসিক ভবন তৈরি হোক। ইতিমধ্যে প্রি ডিপিপি হয়ে গেছে। আনুমানিক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা লাগতে পারে।

কাস্টম মিউজিয়াম করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে কমিশনার বলেন, নতুন কর্মকর্তা ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মীদের কাজের সুবিধার্থে আমরা আমদানি-রফতানি পণ্যের নমুনা এবং এইচএস কোড সংগ্রহ করে মিউজিয়ামে রাখা হবে। এখন অনেকে নমুনা আর কোড নিয়ে বেকায়দায় পড়েন। এ মিউজিয়ামটি কাস্টম হাউসের ভেতরেও হতে পারে আবার পাশেও হতে পারে। বিদেশে এ ধরনের মিউজিয়াম আছে। এ উদ্যোগে সবার সহযোগিতা চাই।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
এআর/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।