মাহফুজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ওই ব্যক্তি চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র আমার হাত থেকে নিয়ে বলে, আমার সঙ্গে চলেন। কম দামে সব ওষুধ কিনে দেব।
চমেক হাসপাতালে মাহফুজের মতো হাজারো অসহায় রোগী ও তাদের স্বজন এভাবে দালালদের খপ্পরে পড়ছেন প্রতিনিয়ত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথমে তারা বিভিন্ন উপায়ে চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্র সংগ্রহ করে। এরপর কম মূল্যে ওষুধ কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রোগীর স্বজনদের বিভ্রান্ত করে ফেলে। এতে অনেকেই দালালদের কথা বিশ্বাস করে প্রতারিত হন।
দালালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ৬০ থেকে ৭০ জন প্রতিদিন দুই বেলা ডিউটি করে। প্রত্যেকের এলাকা ভাগ করা। মূলত তারা হাসপাতালে পূর্ব গেটে অবস্থিত ওষুধ দোকানগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে দালালি করে।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ব্যস্ত ওয়ার্ডগুলোই তাদের লক্ষ্য। ওয়ার্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কাজে দালালদের সহযোগিতা করে।
তিনি জানান, দালালেরা প্রথমে জরুরি বিভাগ থেকে রোগীকে অনুসরণ করে ওয়ার্ডে যায়। সাধারণত ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রয়োজনীয় ওষুধের একটি ব্যবস্থাপত্র দেন। দালালদের নজর থাকে ওই ব্যবস্থাপত্রে। এরপর সুযোগ বুঝে রোগীর স্বজনের সাথে ভাব জমান তারা। এক্ষেত্রে হাসপাতালে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দালালদের সহযোগিতা করেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। নানা কৌশলে দালালেরা ব্যবস্থাপত্র হাতে পেলে নির্দিষ্ট দোকানে নিয়ে যায় রোগীর স্বজনদের।
জানা যায়, ওষুধের দোকান থেকে প্রতি হাজারে একশ টাকা কমিশন নেয় দালালেরা। অন্যদিকে দালালদের হাসপাতালে ঢুকতে দেয়ার অনুমতি বাবদ প্রভাবশালী চক্র সপ্তাহে এক থেকে দেড় হাজার টাকা চাঁদা নেয় ওষুধের দোকান থেকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, যেখানে রোগী, সেখানেই হাজির হয়ে যায় দালালেরা। মূল ফটক থেকে পুরো হাসপাতাল জুড়ে রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য।
পায়ে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে সেবা নিচ্ছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রকৌশলী হাসান মুরাদ। ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে ৫১ নম্বর বেডে তার চিকিৎসা চলছে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, হাসপাতালে যখন আনা হয়, তখন আমার জ্ঞান ছিল না। পরে শুনলাম আমার ভাই এক দালালের সঙ্গে ওষুধের দোকানে গিয়ে অতিরিক্ত দামে ওষুধ কিনে এনেছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দালালের খোঁজ পেলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এরপরেও কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে দালালরা হাসপাতালে ঢুকছে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দালালমুক্ত হাসপাতালের জন্য গেটপাস, ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ফলে অতীতের তুলনায় দালাল অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি প্রতি ওয়ার্ডে আনসার সদস্য দায়িত্বে আছে। ’
‘তবুও কিছু অসাধু ব্যক্তি হাসপাতালে দালালি করছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের দালাল প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ’
তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ এসে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে চলে গেলে হবে না। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, কেন যাব? সুতরাং লোকজন সচেতন হলে দালালি থাকবে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
এসইউ/এসি/টিসি