ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এক তৃতীয়াংশ চিকিৎসক নেই চট্টগ্রামে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
এক তৃতীয়াংশ চিকিৎসক নেই চট্টগ্রামে প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় চট্টগ্রামে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বেশিরভাগ চিকিৎসা কেন্দ্রে অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিস্ট) না থাকায় সেখানে অস্ত্রোপচার হয় না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে জটিল রোগে আক্রান্তদের বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে বেশি টাকা খরচ করে সেবা নিতে হচ্ছে।

সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চিকিৎসকের ৫০২টি পদের মধ্যে ১৬১টি পদ শূন্য।

চট্টগ্রাম শহরের সন্নিকটে পটিয়া উপজেলা।

গাইনি চিকিৎসক ছাড়া চলছে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২১টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১০টি শূন্য।  এ ছাড়া কর্মরতদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক প্রেষণে, দুজন চলে গেছেন দেশের বাইরে। চক্ষু ও সার্জারি বিভাগে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

আরেক নিকটবর্তী উপজেলা হাটহাজারীতেও একই চিত্র। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবেদনবিদ না থাকায় সেখানে অস্ত্রোপচার হয় না। এ ছাড়া চক্ষু ও চর্মরোগের চিকিৎসক নেই দীর্ঘদিন। শিশু ও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক প্রেষণে। মেডিসিন, ডেন্টাল সার্জন পাঁচদিন জেনারেল হাসপাতালে ও একদিন কমপ্লেক্সে রোগী দেখেন।

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের চিত্র আরও ভয়াবহ। সেখানে নেই সরকারি কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। উপজেলার তিনটি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে ৩১ শয্যার গাছুয়া হাসপাতালে দুজন চিকিৎসক, হারামিয়া ও হরিশপুর হাসপাতালে একজন করে চিকিৎসক কর্মরত আছেন। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে একটিতে চিকিৎসক আছেন।

চট্টগ্রামের প্রায় উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার চিত্র এমন। গ্রামের এসব চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। চিকিৎসক না থাকায় দরিদ্র মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা  থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জানা গেছে, ৩৩তম বিসিএস থেকে চিকিৎসক নিয়োগের পর গ্রামের এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে গ্রামের মানুষ চিকিৎসা নিয়ে সুফল পেয়েছেন। কিন্তু নিয়োগ লাভের কয়েক বছর পর এসব চিকিৎসক অজুহাত দেখিয়ে গণহারে বদলি হয়ে গেছেন। এতে করে গ্রামে ও উপজেলা সদর হাসপাতালগুলো চরম চিকিৎসক সংকটে পড়েছে। মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব চিকিৎসা কেন্দ্র প্রত্যন্ত গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে, গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন সহজে চিকিৎসা সেবা পায়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক রাখা যাচ্ছে না। তদবির করে বদলি হয়ে যাচ্ছেন তারা। ফলে গ্রামীণ এসব চিকিৎসাকেন্দ্রে দেখা দিয়েছে চিকিৎসক সংকট।

সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলার ৭২টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল কর্মকর্তার পদ খালি রয়েছে ৪৯টি। একই হাল পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে। ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৭টির মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য।

হাটহাজারী পৌরসভার বাসিন্দা ডেইজি আখতার বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ অসুখ নিয়ে গেলেও সেবা পাওয়া যায় না।

সন্দ্বীপের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গুরুতর অসুস্থ হলে সন্দ্বীপে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। জরুরি চিকিৎসার জন্য মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটেন।

হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম ইমতিয়াজ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অবেদনবিদ না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার সেবা বন্ধ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলেও সাধারণ রোগীদের এখানে সেবা দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এজন্য আমি নিজেও রোগী দেখি।

সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, দ্বীপ উপজেলায় চিকিৎসকরা থাকে না। আসলেও অল্পদিন থেকে বদলি হয়ে যায়। যে কয়জন চিকিৎসক আছেন, তারা এ উপজেলার সন্তান। অন্যথায় তাদেরকেও ধরে রাখা কষ্টকর হতো।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী  বলেন, অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে চিকিৎসক সংকট কম। তবে চিকিৎসক পদ শূন্য থাকায় সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সরকার বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিবে বলছে। আশা করি সে নিয়োগে চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
এসইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।