ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মও আইয়ের

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
মও আইয়ের লোকালয়ে নেমে আসা দুই বন্য হাতি।

চট্টগ্রাম: সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ‘মও’ আতঙ্ক। আনোয়ারার শাহমীরপুর, দৌলতপুর গ্রাম ও কর্ণফুলী উপজেলার কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (কেইপিজেড) প্রায় দুই মাস ধরে চলছে ‘মও’ এর তাণ্ডব।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় হাতিকে ডাকা হয় ‘মও’ নামে। দিনের বেলায় স্থানীয় দেয়াঙ পাহাড়ে অবস্থান নেয়া দুটি বন্য হাতি সন্ধ্যায় সড়ক ও লোকালয়ে নেমে আসে।

এরপর শুরু হয় মানুষের ছুটোছুটি, সবাই মুখে জানান দেয়- মও আইয়ের (হাতি আসছে)।

হাতির আক্রমণে গত ১৯ জানুয়ারি সকালে শাহমীরপুর গ্রামে আহত হন রুনা আক্তার (২৫) ও তার ছেলে শরীফুল ইসলাম সাইমন (৪)।

গত বছরের ১৩ জুলাই বৈরাগ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে হাতির পদপিষ্ট হয়ে মারা যান বৃদ্ধ আবদুর রহমান (৭০)। কর্ণফুলীর বড়উঠান খিলপাড়ায় হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় জালাল আহমদ (৭২) এর। চাপাতলি গ্রামে আহত হন আরেক নারী। ২০১২ সালেও মরিয়ম আশ্রম এলাকায় জুয়েল দাশ নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়।

কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, বন্য হাতি দুটি গাছপালা উপড়ে ফেলছে, স্থাপনা ভাঙছে। এখানকার ২৩টি কারখানায় কাজ করেন আনোয়ারা-কর্ণফুলী ও আশপাশের এলাকার প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক। সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার জন্য বের হতেই তারা হাতি আতংকে ভুগছেন।

কেইপিজেডের প্রশাসন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মঈনুল আহসান জানান, গত দুই মাসে বন্য হাতি তাণ্ডব চালিয়ে কেইপিজেডের বনায়নকৃত নারকেল গাছ, সুপারি গাছ সহ বিভিন্ন মূল্যবান গাছপালা উপড়ে ফেলেছে, ভেঙে দিয়েছে বেশ কয়েকটি স্থাপনা। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।  এখানে দায়িত্বরত শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তা প্রহরীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় দাশ বলেন, পাহাড় থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে স্থাপনা। বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে বন্য হাতি। তাই তারা লোকালয়ে হানা দিচ্ছে, ধানক্ষেতে গিয়ে ধান খাচ্ছে। ঘরে ধান খুঁজতে গিয়ে সব গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। ‘মও আইয়ের’ শুনলেই কাঁসা, ঘণ্টা ও টিন বাজিয়ে হাতি তাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চলে।

শাহমীরপুর গ্রামের প্রবীণ শামসুল আলম জানান, পাহাড়সংলগ্ন এলাকার অনেক মানুষ এখন রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিচ্ছে। কখনো বাজি ফুটিয়ে আবার কখনো মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রায় প্রতি রাতেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতি দুটি।

বন বিভাগ পটিয়া রেঞ্জের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হাতি দুটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বন্য প্রাণী বিভাগ চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা প্রতিদিন দেয়াঙ পাহাড়ে গিয়ে হাতিগুলোকে আরও গভীর জঙ্গলে পাঠানোর চেষ্টা করছি।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বাংলানিউজকে বলেন, হাতি দুটিকে তাড়াতে এখানে বন বিভাগের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। এজন্য একজন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞকে আনা হচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সচেষ্ট আছি। আশা করছি শিগগিরই মানুষ এ আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।