ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘তালা মেরে ঘুমাতো বস্তির ভাড়াটিয়ারা’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
‘তালা মেরে ঘুমাতো বস্তির ভাড়াটিয়ারা’ স্বজনদের মরদেহ সনাক্ত করছেন বস্তিবাসীরা। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: চোর, মাদকাসক্তের উৎপাত আর অজানা আতঙ্কে ভেতর থেকে তালা মেরে বস্তির ঘরগুলোতে ঘুমাতেন ভাড়াটিয়ারা। এ কারণে আগুন লাগার পর যেমন তারা দ্রুত ঘর ছাড়তে পারেনি তেমনি মূল্যবান জিনিসপত্রও বের করতে পারেনি।

ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. জসীম উদ্দীনের বক্তব্যে বিষয়টি উঠে আসে।

>> চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ে ৯ জনের মৃত্যু
>> ‘যে রহিমা আমাদের বাঁচালো সেই পুড়ে মরলো’

খুরশিদা বেগম এ বস্তিতে থাকেন ২ বছর ধরে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১ হাজার ৮০০ টাকায় ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম। চোরের উৎপাতে ঘরের বাইরে কিছু রাখার জো নেই।
রান্নার মাটির চুলাটাই শুধু বাইরে থাকে। রাতে সবাই ভেতর থেকে তালা মেরে ঘুমাই। ওই তালার চাবি খুঁজতেই সময় শেষ।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভেড়া মার্কেট বস্তি।  ছবি: সোহেল সরওয়ারপারভিন আকতার (৩৫) ছেলেকে কোলে নিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কের দোকানের সামনে বসে কাঁদছিলেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সারাদিন পরিশ্রম করে রাত ১২টার দিকে ঘুমিয়েছি। আড়াইটায় শোরগোল। ‘আগুন! আগুন’ চিৎকার। জমানো টাকা, হাতের-গলার স্বর্ণালংকার নিতে গেলে দেখছি পুড়ে মরবো। উপায় না দেখে ছেলেকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ঘর ছেড়ে। ভাগ্যিস মোবাইল ফোনটা ছেলের পকেটে ছিল।

তিনিও বলেন, ‘সবার মতো আমিও ভেতর থেকে তালা মেরে ঘুমিয়েছিলাম। চোরের উৎপাত, হেরোইন্সির উৎপাতে তালা না মেরে উপায় থাকে না। ’

মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যান পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।  ছবি: বাংলানিউজআগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়া প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের মো. জসীম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি খাস জমিতে গড়ে তোলা এ বস্তির কাঁচা ঘরগুলো খুবই কাছাকাছি। এখানে প্রচুর দাহ্যবস্তু রয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগও আছে। অনেকে মশার কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমায়, বিড়ি-সিগারেট খায়। রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার আছে। তাই আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, এর সঙ্গে কোনো নাশকতাকারী জড়িত কিনা তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। জেলা প্রশাসক ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

তিনি বলেন, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি-এখানকার বেশিরভাগ ঘরেই মানুষ ভেতর থেকে তালা মেরে ঘুমান। তালা খোলার ঝক্কির কারণে দুর্ঘটনার সময় তাড়াহুড়ো করে নিজেরা বের হতে কিংবা জিনিসপত্র বের করতে বেগ পেতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।