ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘যে রহিমা আমাদের বাঁচালো সেই পুড়ে মরলো’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
‘যে রহিমা আমাদের বাঁচালো সেই পুড়ে মরলো’ আগুনে নিঃস্ব বস্তিবাসীর কান্না। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: কেউ হারিয়েছে স্বজন। কারও গেছে সারা জীবনের সঞ্চয়। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, চাল, ডাল, পরনের কাপড়, কাঁথা-বালিশ সব কেড়ে নিয়েছে সর্বনাশা আগুন। খোলা আকাশের নিচে থেমে থেমে বিলাপ করছেন ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা। তাদের ঘিরে ক্ষুধা আর আতঙ্কে কান্নাকাটি করছে শিশুরা।

নগরের বাকলিয়া থানাধীন চাক্তাই ভেড়া মার্কেট এলাকায় আগুনে পোড়া বস্তিতে রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালের দৃশ্য এটি। ভোররাতে আগুন লেগে শতাধিক সেমিপাকা, কাঁচা বস্তিঘর, দোকান, হোটেল পুড়ে গেছে।

অগ্নিদগ্ধ হওয়া নারী-শিশুসহ নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

>> চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ে ৯ জনের মৃত্যু

সালমা আকতার ভস্মস্তূপ হাতড়ে বের করছিলেন এটা-ওটা।

একপর্যায়ে পেলেন মেয়ে তাসলিমার চতুর্থ শ্রেণির নতুন বইগুলো। চারদিকে পুড়ে গেছে। সেগুলো বুকে নিয়ে বিলাপ শুরু করেন তিনি।

বললেন, ২ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিলাম ঘর। মেয়ের বাবা নৌকায় কাজ করে। দুঃখের সংসার গুছিয়ে মেয়েটিকে পড়াতাম কোনোরকমে। এখন তার বই-খাতাসহ পুরো ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আগুনে নিঃস্ব বস্তিবাসীর কান্না।  ছবি: সোহেল সরওয়ারপটিয়ার শান্তিরহাটের রুমা আকতার (৩৫) ৭ বছর ধরে থাকেন এ বস্তিতে। মাছের গদিতে দেওয়ার জন্য অনেক কষ্টে জমিয়েছিলেন ১ লাখ টাকা। আগুনের লেলিহান শিখা যখন তার ভাড়া বাসাটি ঘিরে ফেলছিল তখন বিছানার নিচে রাখা টাকা না নিয়েই পড়িমরি করে বেরিয়ে প্রাণে বেঁচে যান।

রুমা বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, আগুন লাগার পর সবাই রহিমার চিৎকার শুনে জেগে উঠি। তিনি সবাইকে ডাকার পর নিজের ঘরে যান মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা নিয়ে আসতে। আমি নিষেধ করেছি, শুনেনি। শেষে তিন সন্তানসহ রহিমা পুড়ে মরেছে। যে আমাদের ডেকে দিয়ে বাঁচাল সে-ই মারা গেল, এটাই বড় আফসোস।

নূর বেগম ১ হাজার ৮০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ৬ বছর ধরে থাকছেন বস্তিতে। বললেন, পাশের গার্মেন্টে কাজ করি। নিজে না খেয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। সব পুড়ে গেছে। দম বন্ধ অবস্থায় জান নিয়ে কোনো রকমে পালিয়েছিলাম।

তার সহকর্মী রেহানা বেগম। ভোররাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা ঘুমিয়েছিলাম। আগুনের দাউ দাউ শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দুই সন্তানকে নিজে হাতে নিয়ে বেরিয়েছি। আরেকটি বোনের কোলে দিয়েছিলাম। কিছুই বের করতে পারিনি।

আগুনে নিঃস্ব বস্তিবাসী।  ছবি: সোহেল সরওয়ারফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা ও বাতাসের গতিবিধির কারণে বস্তির আশপাশে বেশ কিছু ঘরে আগুন লাগেনি। মো. জাকির হোসেন (৫৮) সেই সৌভাগ্যবানদের একজন। তিনি বলেন, আগুন লাগছে জানার পর ঘরে প্লাস্টিকের বালতিতে পানি ছিল, তা নিয়ে ছুটে যাই। কিন্তু এত তেজ, বালতিই পুড়ে গেল। প্রাণ হাতে ছুটলাম।

রহিমা আকতারের ভাই মো. আকবর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার দুলাভাই আরেকটি বিয়ে করেছে। বোনই পরিবারের হাল ধরেছিল। রাতে বোন সবাইকে ডেকে দেওয়ার পর নিজেই পুড়ে মারা গেল। সঙ্গে তিন ভাগনে-ভাগনিও।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।