মঞ্চ থেকে একটু দূরে প্রথমা প্রকাশনীর স্টলে নীল পাঞ্জাবি পরা এক তরুণ তার সঙ্গে ঠোঁট মেলাতে শুরু করলেন। নীল শাড়ি পরা পাশের তরুণীকে লক্ষ্য করে গাইলেন ‘এ দুটি হৃদয় কাছে আসার’।
মূহুর্তেই হেসে উঠলেন দু'জন। এরপর নিজেদের সামলে নিয়ে মগ্ন হলেন বই বাছাইয়ে।
নীল পাঞ্জাবি পরা তরুণ শাওন চৌধুরী পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। নীল শাড়ি পরা তরুণী প্রিয়াংকা বড়ুয়া শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন চট্টগ্রাম আদালতে।
কথা প্রসঙ্গে শাওন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, বাড়ি চট্টগ্রামে হলেও কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকি। বসন্ত উৎসব এবং ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে এসেছি। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে সারাদিন ঘুরে এখন বইমেলায় এলাম বই উপহার দেবো বলে।
প্রিয়াংকা বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, সম্প্রতি পারিবারিকভাবেই বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হয়েছে। বিয়ের আগে এটাই শেষ ভ্যালেন্টাইন দিবস আমাদের। তাই ভিন্নভাবে পালনের ইচ্ছে ছিলো। সারাদিন নিজেদের মতো সময় কাটিয়েছি। এখন এলাম বই মেলায়।
তিনি জানান, ইট-পাথরের এ শহরে যান্ত্রিক জীবনের কারণে আমরা অনেকেই নিজেদের গৌরবময় সাহিত্য-সংস্কৃতি ভুলতে বসেছি। এ সময় বড় পরিসরে এ ধরনের বইমেলার আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে অমর একুশে বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু শাওন এবং প্রিয়াংকা নন, তাদের মতই একাধিক প্রেমিক যুগল বইমেলায় এসেছেন।
ভালোবাসার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কেউ প্রিয় লেখকের বই কিনেছেন। কেউ মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেছেন। কেউবা সেলফি আর ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তবে প্রেমিক যুগলের পাশাপাশি নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের ভিড়ও লক্ষ্য করা গেছে বইমেলা ঘুরে।
বলাকা প্রকাশন থেকে লেখিকা আফরোজা বানুর ইতি ‘নক্ষত্র বই’ কিনেন ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম। তিনি বাংলানিউজকে জানান, বইমেলা আমাদের প্রাণের উৎসব। দীর্ঘদিন পরে হলেও চট্টগ্রামে বড় পরিসরে বইমেলার আয়োজন দারুন বিষয়।
নালন্দা প্রকাশনের বিক্রয় কর্মকর্তা তাহসিন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, যত সময় যাচ্ছে বইমেলা জমজমাট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে পহেলা ফালগুন ও ভ্যালেন্টাইনের দিন তরুণ-তরুণীদের উপচে পড়া ভিড় ছিলো মেলা প্রাঙ্গণে। বিক্রিও হয়েছে ভালোই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহায়তায় প্রথমবারের মতো ১৯ দিনব্যাপী অভিন্ন এ বইমেলার আয়োজন করেছে। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১১০টি প্রকাশকের স্টল রয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে মেলা শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময় ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
এমআর/টিসি