ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দিনে ৩টি তালাক চট্টগ্রামে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
দিনে ৩টি তালাক চট্টগ্রামে! প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারায় দিনে ১২টি তালাকের নোটিশ জমা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক)। স্বামী-স্ত্রী দুইপক্ষের শুনানি শেষে প্রতিদিন কার্যকর হয়েছে ৩টি। ২০১৮ সালের চিত্র এটি।

একের পর এক সুখের সংসারে আগুন লাগছে। বিচ্ছেদের অনলে পুড়ে ভেঙে খান খান হচ্ছে একেকটি পরিবার।

ভাঙা পরিবারের শিশুরা হারাচ্ছে আনন্দময় শৈশব। কিন্তু কেন?

চসিকের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস এ প্রশ্নের উত্তরে বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মাদকাসক্তি, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, পরকীয়া, শারীরিক অক্ষমতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন অ্যাপস, স্মার্টফোনের অপব্যবহার, ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ প্রবণতা, স্বামী প্রবাসী হলে স্ত্রীর শ্বশুর পক্ষের লোকজনের অসহযোগিতা, সন্তান না হওয়া বা ছেলে সন্তান না হওয়া, একাধিক বিয়ের প্রবণতা, দম্পতিদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহনশীলতার অভাব, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে সংসার ভাঙছে।

অনেক সময় তালাকের আবেদনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মনগড়া, মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। যা উভয়পক্ষের ফাটল আরও বড় করে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি স্বামীরা শুধু নয়, স্ত্রীরাও মাদকাসক্ত হওয়ায় সংসার ভেঙেছে। তবে তা ১ শতাংশ। চট্টগ্রামে আরেকটি জিনিস দেখেছি, একদিকে কনেপক্ষকে বিয়েতে ২ হাজার, ১০ হাজার মানুষকে খাওয়াতে বাধ্য করা হয়। আবার কনেপক্ষ ২০-৩০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে কাবিননামায়। একধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে। শেষপর্যন্ত বিয়ে টিকছে না।  

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নগরের ১৬টি থানার ৪১টি ওয়ার্ড থেকে তালাকের নোটিশ জমা পড়েছে ৪ হাজার ৪১৯টি। আগের বছরে নিষ্পত্তি না হওয়া ছিল ১ হাজার ৯৫টি। সব মিলে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫০৬টি। এর মধ্যে উভয় পক্ষের শুনানির পর কার্যকর হয়েছে ১ হাজার ৩৫টি। আগের বছর যা ছিল ৯৫৮টি।

শুনানিকালে উভয় পক্ষের সম্মতিতে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে ১৩৪টি। সিটি করপোরেশন এলাকায় স্বামী-স্ত্রী কোনো পক্ষের ঠিকানা না থাকায় খারিজ হয়েছে ১২১টি। বর্তমানে ৯০ দিন অতিক্রান্ত সূত্রে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৯৩৩টি।

সূত্র জানায়, নগরের ১৬ থানাকে দুইটি ভাগ করে সালিসি মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে আদালত-১ এর অধীনে রয়েছে কোতোয়ালী, সদরঘাট, চকবাজার, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, বায়েজিদ ও কর্ণফুলী থানা। আদালত-২ এর অধীনে রয়েছে খুলশী, ডবলমুরিং, হালিশহর, আকবর শাহ, ইপিজেড, বন্দর, পাহাড়তলী ও পতেঙ্গা থানা।  

স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহের ঘটনায় কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তালাক কমানো উচিত মন্তব্য করে অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কারণে-অকারণে অনেক সময় তুচ্ছ ঘটনায়ও তালাক নোটিশ হচ্ছে। ফলে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে তালাকের ঘটনা। মধ্যবিত্ত পরিবারে অভাবের কারণে যেমন যৌতুকের দাবি মেটাতে পারছে না অভিভাবকেরা তেমনি উচ্চবিত্ত পরিবারে ‘ইগো প্রবলেম’ প্রকট আকার ধারণ করেছে। রয়েছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও পরমতসহিষ্ণুতার অভাব।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।