ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আ.লীগ থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন এলডিপি সভাপতি!

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
আ.লীগ থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন এলডিপি সভাপতি! এলডিপির কর্মীসভায় অলি আহমদের পাশে জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল (গোল চিহ্নিত)।

চট্টগ্রাম: আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লোহাগাড়া থেকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন উপজেলা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি ও সাবেক বিএনপি নেতা জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। ইতোমধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের নাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রস্তাব করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে।

অভিযোগ উঠেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার পর জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন শুধু উপজেলা চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নিতে।

জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের আওয়ামী লীগে যোগদান ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে নাম প্রস্তাবের পেছনে রয়েছে বড় ধরণের ‘আর্থিক লেনদেন’।

এলডিপির সর্বশেষ লোহাগাড়া উপজেলা কমিটি।                                             <div class=

" src="https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2018October25/bg/Babul-BG-520190212205558.jpg" style="margin:1px; width:100%" />দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ার কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল তো লোহাগাড়া উপজেলা এলডিপির বর্তমান সভাপতি। কয়েকদিন আগে তিনি নাকি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এলডিপি থেকে পদত্যাগ না করে কীভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন!’

আনোয়ার কামাল বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে এলডিপি নেতা জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের নাম প্রস্তাবের বিষয়টি শুনে খুব মর্মাহত হয়েছি। যে লোক সারাজীবন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলবদল করে করে সুবিধা নিয়ে গেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার করেছেন তার নাম কীভাবে প্রস্তাব করা হলো! লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগের অনেক যোগ্য নেতা আছেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা আছেন তাদের থেকে কাউকে প্রস্তাব দেওয়া যেতো। ’

জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল বিএনপির যেসব কমিটিতে দায়িত্বে ছিলেন।  দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নুরুল আবছার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যারা সারাজীবন আওয়ামী লীগ করেছি তাদের বাদ দিয়ে এলডিপি নেতা জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলকে মনোনয়নের জন্য প্রস্তাব করেছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর্থিক সুবিধা নিয়ে এ কাজ করা হয়েছে। ’

জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে দীর্ঘদিন লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের দল এলডিপিতে যোগদান করেন। এলডিপি লোহাগাড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন। আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন এমন শোনা গেলেও জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল এখনও এলডিপি থেকে পদত্যাগ করেন নি বলে জানা গেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। তিনি বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন- ১৯৯১ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগ করে আসছেন। কখনও বিএনপি বা এলডিপির রাজনীতি করেন নি বলেও দাবি করেন তিনি।

জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি কখনও বিএনপি বা এলডিপির রাজনীতি করিনি। আওয়ামী লীগ করেছি। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে শুনেছি। ’

তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলকে লোহাগাড়া উপজেলা কমিটির বর্তমান সভাপতি দাবি করেন।

১৮ দলীয় জোটের মিছিলে জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল দীর্ঘদিন ধরে এলডিপির সঙ্গে আছেন। তিনি এলডিপি ছেড়ে যাননি। তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন বলে গুজব ছড়িয়েছে। এটি সত্য নয়। তিনি লোহাগাড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন এখনও। ’

এদিকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলকে একক প্রার্থী হিসেবে নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানোর পর ৭ ফেব্রুয়ারি জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের ব্যাপারে জানিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে অভিযোগ করে চিঠি দেন লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী।

খোরশেদ আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘তৃণমূলকে পাশ কাটিয়ে দলীয় লোকের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নেতাকর্মীরা মেনে নেবেনা। লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতা আছেন তাদের মধ্য থেকে যাকে দেওয়া হবে তার পক্ষে আমরা সাধারণ নেতকর্মীরা কাজ করবো। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে আমরা তিনজন দলীয় লোকের নাম প্রস্তাব করে চিঠি দিয়েছি। ’

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবকিছু বিবেচনায় আমরা আওয়ামী লীগ থেকে জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের নাম প্রস্তাব করেছি। গতবারে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ছিলনা তখন আমরা জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলকে সমর্থণ দিয়েছিলাম। তিনি এখন আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।