ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কর্ণফুলী

সাফ হলো সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৯
সাফ হলো সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে প্রথম পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান শেষ করেছে প্রশাসন। টানা পাঁচ দিন অভিযান চালিয়ে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত নদী তীরের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত করা হয়েছে এ অভিযানে।

সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সদরঘাট থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বারিক বিল্ডিং এলাকায় গিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শেষ হয়।

এ অভিযানের মাধ্যমে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে বেদখলে থাকা প্রায় ১০ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়।

আরও খবর>>
** 
উচ্ছেদে ১ হাজার শ্রমিকের কাজ করছে ১টি ‘লংবুম’

টানা পাঁচ দিনের এ উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান। তাকে সহায়তা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।

কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান।  ছবি: সোহেল সরওয়ারসহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ ছিলো। শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি। প্রথম পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, টানা পাঁচ দিনের এ অভিযানে ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে বেদখলে থাকা প্রায় ১০ একর ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও পাঁচটি খালের মুখ দখলমুক্ত করা হয়েছে।

‘প্রথম পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযানের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) সমন্বয় সভা শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযানের সময়সূচি ও পরিকল্পনা ঠিক করা হবে। ’ বলেন তাহমিলুর রহমান।

ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চসিক, সিডিএ, বন্দর, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সবার সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান আমরা শেষ করতে পেরেছি। এখন উচ্ছেদ অভিযানের সময় যে আবর্জনা জমেছে সেগুলো পরিষ্কার করা হবে। শনিবার থেকে চসিক আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ শুরু করবে। আমরা সীমানা পিলার বসানোর কাজ শুরু করবো।

কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান।  ছবি: সোহেল সরওয়ারতিনি বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে ৫টি খালের মুখ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বর্ষায় বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যাবে। চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের ‘দুঃখ’ জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।

এর আগে উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম দিন সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) কর্ণফুলীর সদরঘাটের লাইটার জেটি এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। এ সময় প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৪ একর ভূমি দখলমুক্ত করা হয়।

দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মাঝির ঘাট এলাকায় ৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দখলমুক্ত করা হয় একটি উপখালের মুখ।

তৃতীয় দিন বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মাঝির ঘাট থেকে হাবিব গলি পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ৪০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) হাবিব গলি থেকে আনু মাঝির ঘাট পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

টানা পাঁচ দিনের এ উচ্ছেদ অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অংশ নেন। ১০০ শ্রমিক উচ্ছেদ অভিযানে কাজ করেন।

২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ’ এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলেন।

আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। নগরের নেভাল অ্যাকাডেমি সংলগ্ন নদীর মোহনা থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত অংশে ২০১৫ সালে জরিপের কাজ শেষ করা হয়।

জরিপে নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়।

এরপর ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

এরপর আরও কয়েকবার অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও সাড়া মেলেনি। ফলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানও শুরু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।

সর্বশেষ অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের আশ্বাসে সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।