ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রযুক্তি পাল্টে দিলো দৃষ্টিহীনদের জীবন

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
প্রযুক্তি পাল্টে দিলো দৃষ্টিহীনদের জীবন অ্যাক্সেসিবল ই-লার্নিং সেন্টারে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গল্প এটা। অন্য দশজন স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতো সহজ ছিল না তাদের পথচলা। কিন্তু প্রযুক্তি যখন হাতের মুঠোয়, তখন কোনো বাধা আটকাতে পারে না অদম্য মেধাবীদের।

ডিজিটাল সুবিধার বদৌলতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা এখন পাঠ নিচ্ছেন ‘অ্যাক্সেসিবল ই-লার্নিং সেন্টারে’। এতদিন ব্রেইল পদ্ধতিতে স্পর্শানুভুতির মাধ্যমে পড়ালেখা করতে হতো তাদের।

৬টি ডটের বিভিন্ন কম্বিনেশনের সাহায্যে সংখ্যা ও অক্ষর অনুভব করে কতো পরিশ্রমে তারা পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন, সেই কষ্টটুকু শুধু তারাই বুঝতেন। কিন্তু এবার কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে অডিও শুনে শুনেই তারা পড়ালেখা করতে পারবেন।

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ ‘অ্যাক্সেসিবল ই-লার্নিং সেন্টার’ সম্প্রতি চালু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে। এতে সহযোগিতা করেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব এবং এটুআই প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, একে খান ফাউন্ডেশন ও ইপসা।

এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ১১০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তথ্য ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা নিচ্ছেন। যে তিনজন তাদের ব্যবহারিক শিক্ষা দিচ্ছেন, তারাও দৃষ্টিহীন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নেওয়ার পর নিজেরাই কম্পিউটার ব্যবহার করে অডিও’র মাধ্যমে পড়ালেখা করতে পারবেন।

নতুন এই ‘ই-লার্নিং’ সেন্টারে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার, অ্যাক্সেসিবল ডিকশনারি, দুই শতাধিক ডিজিটাল টকিং বুক, তিনশটি ই-বুক, ৫০টির বেশি ব্রেইল বই ও ১০০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ধারাবাহিকভাবে আইসিটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

অ্যাক্সেসিবল ই-লার্নিং সেন্টারে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা। সরেজমিন দেখা যায়, কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা। কানে হেডফোন, হাতে কী-বোর্ড আর চোখে কালো চশমা। কম্পিউটারে তাদের কাজের পরিধি কম্পোজ করে ই-মেইল চেক, চ্যাট কিংবা জটিল হিসাব কষছেন তারা। ভুল হলে শুধরিয়ে দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান চৌধুরী। যিনি নিজেও একজন দৃষ্টিহীন। তবে চোখে দৃষ্টি না থাকলেও, তাদের আছে মনোবল। সেই মনোবলের জোরে শ্রবণশক্তি আর কী-বোর্ড ব্যবহার করে কম্পিউটার চালাচ্ছেন তারা।

মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কম্পিউটারে কথা বলার সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা কী-বোর্ডের ওয়ার্ড চাপলেই তার বিপরীতে টাইপকৃত অক্ষরটি ব্যবহারকারীকে শোনায়। এসব কম্পিউটারে ৫০টির মতো ডিজিটাল কথা বলার ই-বুক দেওয়া হয়েছে, যেখানে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা ক্লিক করলেই অটোমেটিকভাবে বইগুলো পড়ে শুনাবে। দৃষ্টিহীনদের শিক্ষক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানতিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে এসব সম্ভব হয়েছে। যা এতদিন আমাদের কল্পনার বাইরে ছিলো। কম্পিউটারে পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীরা এখন দারুণ খুশি।

সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম। যখন তার সঙ্গে কথা বলছিলাম, তিনি তখন মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের কাজ করছিলেন। দৃষ্টিহীন হয়েও এই কাজটি তিনি কীভাবে করতে পারছেন। এমন প্রশ্নে বললেন, টিটিএস রিডার বা স্ক্রিন রিডারের মাধ্যমে আমরা কাজ করি। এটা আমাদের পড়ে শোনায়। তখন কাজগুলো সহজভাবে করতে পারি।

তিনি বলেন, ডিসকো আমাদের যেমন ট্রেনিং করতে সহায়তা করছে তেমনি কম্পিউটারের মাধ্যমে পড়তেও সহায়তা করছে।

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবিদা সুলতানা বলেন, এই কম্পিউটারগুলো যেনো আমাদের আলাদিনের চেরাগ। এসব প্রযুক্তি পেয়ে আমাদের কাজ ও যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দেশের প্রথম ইনক্লুসিভ ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তোলার একটি অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে অ্যাক্সেসিবল ই-লার্নিং সেন্টার। এর মাধ্যমে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা নিঃসন্দেহে উপকৃত হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৮
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।