নগর ও আশপাশের উপজেলায় বসন্ত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে বয়স্কদের চেয়ে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণত শীতের শেষের দিকে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। গরমে বসন্ত রোগ বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালসহ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জলবসন্তে আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে।
তবে চিকিৎসকরা এ ধরনের রোগীকে হাসপাতালের পরিবর্তে ঘরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত সেরে যায় বলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
চার বছর বয়সী ফয়সাল মেহরাজ ১৩ জানুয়ারি থেকে এ রোগে আক্রান্ত। একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে।
ফয়সালের মা শামসুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকদিন জ্বর ও ব্যথার মাত্রা ছিল বেশি। যন্ত্রণায় সে ছটফট করতো। তবে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।
সাত বছর বয়সী এলিনা তাবাসসুম ১৫ জানুয়ারি থেকে জলবসন্তে আক্রান্ত। তার বাবা আজিজুল কদির বাংলানিউজকে বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসক ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ভালোভাবে পরিচর্যার পরামর্শ দিয়েছেন।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভালোভাবে পরিচর্যা করলে দ্রুত এ রোগ সেরে যায়। ভ্যাকসিন দিলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
চমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন একাধিক জলবসন্তের রোগী আসছে। তবে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে বাসায় রাখতে বলা হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বসন্ত রোগের দুটি উপাদানের মধ্যে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়ে গেছে। এখন আক্রান্ত হচ্ছে জলবসন্তে। ‘ভ্যারিসিলা জস্টার’ নামের ভাইরাসের কারণে জলবসন্ত হয়। যেকোনও বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে বেশি। ’
রোগটির লক্ষণ সম্পর্কে ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকভাবে হাত-পায়ে ব্যথার পর শরীরে ঘামাচির মতো রেশ উঠতে দেখা যায়। তারপর সেগুলো একটু বড় হয়ে ভেতরে পানি জমতে থাকে। এরপর রোগীর অনেক জ্বর আসবে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে আর সঙ্গে সর্দি-কাশিও। খুব দ্রুতই রোগী দুর্বল হয়ে যায়।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জলবসন্ত ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটির প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আছে। ভ্যাকসিন নিলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এ ছাড়া আক্রান্ত হলে রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করলে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেরে ওঠে।
ডা. আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, এ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে রোগীকে অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে। রোগীর ব্যবহার্য সবকিছু আলাদা করে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পুরোপুরি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রোগীর নিবিড় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, জলবসন্তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯
এসইউ/এসি/টিসি