তবে পথচারী না হয়ে কেউ যদি দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে রিকশা, অটো রিকশা, গণপরিবহন কিংবা নিজস্ব গাড়িতে যাত্রী বেশে এ এলাকা পার হতে যান, প্রশান্তির বদলে দুঃসহ যন্ত্রণাই ভোগ করতে হয় তাকে। পড়তে হয় ভয়াবহ যানজটের বিড়ম্বনায়।
জানা গেছে, জামালখান মোড়ের আশপাশে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কাজেম আলী স্কুল, মহসিন স্কুল, আইডিয়াল স্কুল, সেন্ট মেরিস স্কুল, ডা. খাস্তগীর স্কুল, শাহওয়ালী উল্লাহ ইনস্টিটিউট, এজি চার্চ স্কুল, অরবিট স্কুল অবস্থিত।
এসব স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু এবং শেষের সময় প্রায় একই হওয়ার কারণে সকাল ৭টা থেকে ৮টা, বেলা ১১টা থেকে ১২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, একই সময়ে একই স্থানে একাধিক স্কুলে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু ও শেষ, অভিভাবকদের প্রাইভেট গাড়ির অবৈধ পার্কিং, ছুটির সময় স্কুলের সামনে রিকশাজট, ক্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ নানা কারণে জামালখান এলাকায় যানজট হয়।
তাই এসব স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রম ক্লাস্টার পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা প্রয়োজন। এ জন্য প্রশাসনের সমন্বিত তত্ত্বাবধানে স্কুলের ছুটির সময়ে ও ছুটির দিনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
তারা বলছেন, স্কুলগুলো চাইলে নিজস্ব বাস চালু করতে পারে। এসব বাসে করে শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করবে। একটি বাসে গড়ে ৫০ জন শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করতে পারলে অন্তত ২০ থেকে ৩০টি প্রাইভেট গাড়ির প্রয়োজন হবে না। যানজট কমাতে এসব ব্যবস্থা কার্যকর করার ওপরই এ মুহুর্তে বিশেষ জোর দিতে হবে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে যানজট নিরসনে নামকরা ও বড় স্কুলের শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য নিজস্ব বাস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার একটি উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এ ছাড়া বড় স্কুলগুলোর ভেতরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা বের করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ নিয়ে চসিক, পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধানদের মধ্যে কয়েকটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১১ সাল থেকে এটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও গত ৮ বছরেও তা ‘আলোর মুখ’ দেখেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ‘নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে আমাদের অনীহা আছে, বিষয়টি এমন নয়। আমরাও চাই শিক্ষার্থীরাসহ নগরবাসী যানজট মুক্ত থাকুক। তবে এ বিষয়ে বাজেটের সীমাবদ্ধতার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। বাসের ব্যবস্থা করে দিলে আমরা অবশ্যই স্কুলবাস চালু করবো।
তিনি বলেন, স্কুলগুলো ক্লাস্টার পদ্ধতিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করলে এ এলাকায় যানবাহনের চাপ কিছুটা কমবে। যানজটও সহনীয় পর্যায়ে আসবে। তবে এর জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। তারা নির্দেশনা দিলে আমরা পালন করবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ক্লাস্টার পদ্ধতি চালু করলে স্কুলের সামনে যানজট কিছুটা কমবে এটা ঠিক- তবে এতে অভিভাবকরা বিপাকে পড়বেন। কারণ অনেক কর্মজীবী অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে দিয়ে কাজে যান। বিকেলে অনেকের কোচিং-প্রাইভেট থাকে। তাই ক্লাস্টার পদ্ধতি চালু করলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, স্কুলগুলো চাইলে নিজস্ব বাস চালু করতে পারে। তবে সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে এ জন্য বড় অঙ্কের বাজেটের প্রয়োজন আছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতিরও প্রয়োজন আছে। স্কুলগুলো অনুমতির জন্য আবেদন করলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বাংলানিউজকে জানান, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যানজট নিরসনে একাধিক ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজন হলেও জনবল সংকটের কারণে তা সম্ভব হয় না। তবে এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, অনেকে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করে যানজট সৃষ্টি করেন। নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে স্কুলগুলোর সামনে কেউ এমন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বাংলানিউজকে জানান, জামালখান মোড়ের যানজট এখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। স্কুলগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম শুরু ও শেষের সময়টা ক্লস্টার পদ্ধতিতে করা, প্রাইভেট গাড়ির অবৈধ পার্কিং ঠেকানোসহ নানা বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন ও সিএমপির সঙ্গে আমরা কথা বলবো। এটি করা গেলে যানজট সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
তিনি বলেন, সবার সহযোগিতায় জামালখান ওয়ার্ডকে নান্দনিক ও মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করেছি আমরা। সবার সহযোগিতা নিয়ে যানজট নিরসনেও সক্ষম হবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯
এমআর/টিসি