ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যাদের প্রয়াণে শোকাচ্ছন্ন হয় দেশ

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৯
যাদের প্রয়াণে শোকাচ্ছন্ন হয় দেশ আইয়ুব বাচ্চুর জানাজায় শোকাহত মানুষের ঢল

চট্টগ্রাম: হাতে ৬০০ টাকা আর চোখে শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন- এটুকুই ছিল সম্বল। চট্টগ্রামের রবিন তার স্বপ্নের পথে শুরু করলেন যাত্রা। চট্টগ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমালেন ঢাকায়।

ছয় তারের স্পর্শে ঝংকার তুলে হলেন সুরের জাদুকর। হাতে গিটার আর কণ্ঠে একরাশ আবেগকে ধারণ করে তুললেন হাজার সুরের মূর্ছনা।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে হয়ে উঠলেন দারুণ জনপ্রিয়।

উপহার দিলেন ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘আর বেশি কাঁদালে’, ‘অনিমেষ’ সহ কালজয়ী সব গান।

খ্যাতি পেলেন আইয়ুব বাচ্চু-এবি নামে।

লাখো ভক্তকে গিটার ও গান ভালোবাসতে সেখানো সঙ্গীতের এ ধ্রুবতারাটি সুরের গগন থেকে বিদায় নেন গেলো বছরের ১৮ অক্টোবর। তার মৃত্যু কাঁদায় পুরো দেশকে। শোকাহত করে লাখো ভক্তকে।

১৮ অক্টোবর সকালে নিজের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ১৯ অক্টোবর নগরের জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে আইয়ুব বাচ্চুর জানাজায় ঢল নামে মানুষের। লাখো ভক্ত শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সেখানে।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম আইয়ুব বাচ্চুর। শৈশব থেকেই তিনি গান শুনতেন প্রচুর। একসময় নিজেও গাইতে শুরু করেন। এরপর শুরু করেন গিটার চর্চাও।

কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নামে একটা ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন, পরে অবশ্য এর নাম পাল্টে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর ছোটখাট নানা অনুষ্ঠানে তাদের এই ব্যান্ডদল গান করতো।

পরে বন্ধুরা যে যার মতো একেক দিকে ছড়িয়ে পড়লেও আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ডদল ‘ফিলিংস’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন ‘সোলস’ ব্যান্ডে। এই ব্যান্ডের লিডগিটার বাজানোর দায়িত্বে ছিলেন টানা ১০ বছর। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’।

বাংলা ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন আইয়ুব বাচ্চু মঞ্চ পারফরম্যান্সে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। মূলত রক ধাঁচের কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক, ক্লাসিকাল সংগীত এবং লোকগীতি গেয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধতায় ভাসিয়েছেন ‘এবি’।

রণজিৎ রক্ষিতকে শেষ শ্রদ্ধারণজিৎ রক্ষিত

বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহ-সভাপতি, বোধন আবৃত্তি স্কুলের অধ্যক্ষ রণজিৎ রক্ষিত মারা যান ৩০ অক্টোবর। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নামে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনে।  

আবৃত্তির জাদুকর হিসেবে পরিচিতি রণজিৎ রক্ষিতের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামে। বাবা বিপ্লবী যতীন্দ্রমোহন রক্ষিত ও মা রানি রক্ষিত। ষাটের দশকে নিয়মিত আবৃত্তিচর্চার পাশাপাশি নাট্য আন্দোলনেও সম্পৃক্ত হন তিনি।

১৯৬৫ সালে শিক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কুনজরে পড়েন এবং কারাবরণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম সহায়ক সমিতির সদস্য ছিলেন।

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের প্রথম পথনাটক গণায়ন নাট্য সম্প্রদায়ের ‘যায় দিন ফাগুন দিন’ এ মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তখন থেকে গণায়ন ও নান্দীকার নাট্য সম্প্রদায়ে কাজ করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম বেতারে নিয়মিত কাজ করেন। অভিনয় করেন চারটি টেলিফিল্মে।  

দেশের বাইরে ভারত, যুক্তরাজ্য, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে আবৃত্তি পরিবেশন করে সমাদৃত হন। সম্মাননা দিয়ে তাকে সম্মানিত করেছে সুচেতনা কলকাতা, স্বনন ঢাকা, প্রমা, অবসর, বান্ধব পাঠাগার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ, বর্ণ আবৃত্তি সংসদ, বিশ্বজনীন শান্তি সংঘ, মোপলেসসহ নানা সংগঠন।

রমা চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধারমা চৌধুরী

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অগণিত মা, বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন, রমা চৌধুরী তাদেরই একজন। শুধু সম্ভ্রমই হারাননি তিনি, এরপর থেকে সামাজিক গঞ্জণা সয়ে আর কখনোই মাথা তুলেও দাঁড়াতে পারেননি।

মুক্তিযুদ্ধের ঝাপটায় সম্ভ্রম, ঘরবাড়ি, নিজের সৃষ্ট সাহিত্য, সর্বোপরি দুই সন্তান হারানো এই বিপর্যস্ত জীবনসংগ্রামী তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে খালি পায়ে চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বই বিক্রি করেছেন।

নিজের লেখা বই ফেরি করে বিক্রি করা এই লেখিকার নিজের ভাষায় তিনি ‘একাত্তরের জননী’। ‘একাত্তরের জননী’ খ্যাত বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী মারা যান ০৩ সেপ্টেম্বর।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।