রোববার (১৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান এসব কথা বলেন।
মো. আবদুল মান্নান বলেন, আমরা চাইলেই কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ডিসি-এসপি, বড় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রী সব হতে পারি।
তিনি বলেন, জাতীয় দিবস আসলে আমরা অনেক কথা বলি। কিন্তু সারা বছর এসব নিয়ে আমাদের আর খবর থাকে না। গত ১০টি সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধারা যতবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য কাজ করেছেন, ততবারই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় এসেছে। এবারও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে ক্ষমতায় আনতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত হতে হবে। মাঠে নামতে হবে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধুর সরকারই এদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সংবর্ধনা দিয়েছে। যা এখনো মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানের সঙ্গে পাচ্ছেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে এমন সময় আসবে- সংবর্ধনা নয়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণও জানানো হবে না তাদের।
তিনি বলেন, অনেক অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত ঠিক সুরে গাওয়া হয় না। মুক্তিযুদ্ধের সময় কৃষক মজুরসহ সাধারণ মানুষের সন্তানরা যদি ঠিক সুরে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারে- তাহলে আমাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানরা কেনো বেসুরে জাতীয় সঙ্গীত গাইবে? এর পেছনে কাদের হাত রয়েছে? রাজাকার আল বদরদের কোনো ষড়যন্ত্র আছে কী না- সেটাও মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সন্তানদের জানাতে হবে।
আগুন সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে হবে:
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ভৌগলিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পেতে আমাদের এখনও কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে এখন হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশ অর্থনৈতিক ভাবেও স্বাধীন হয়ে উঠবে। ২০৪১ সালের আগেই দেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।
ডিআইজি বলেন, ৩০ তারিখের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো অশুভ শক্তি যাতে মাথা চড়া দিতে না পারে, আগুন সন্ত্রাস করতে না পারে, সেদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সজাগ থাকতে হবে। আগুন সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আর মুক্তিযোদ্ধারা এক হয়ে কাজ করলে এই বাংলাদেশকে কেউ হারাতে পারবে না।
কারও দয়ায় স্বাধীনতা আসেনি:
সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, কারো দয়ায় কিংবা কোনো চুক্তির মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা আসেনি। আলোচনার টেবিলে বসে অনেকে স্বাধীনতা পেলেও আমাদের স্বাধীনতা এসেছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। যা পৃথিবীর আর কোনো জাতির নেই।
তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও যুদ্ধে পরাজিত শক্তির গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়েনি। নির্বাচনে জিতে পরাজিত শক্তি সংসদে যেতে পারেনি। কিন্তু আমাদের দেশে হয়েছে। এ ব্যর্থতা আমাদের।
কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না:
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে দেশ এখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র গঠনের যে ভিশন সরকার নিয়েছে- উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমরা সেই ভিশন পূরণ করতে সক্ষম হবো। মুক্তিযোদ্ধারা পাশে থাকলে আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের:
স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও চট্টগ্রামে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ ও জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারা বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের এখনো শহীদ মিনারে গিয়ে বিজয় দিবসের ফুল দিতে হয়। এটি আমাদের জন্য হতাশার। চট্টগ্রামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান মুক্তিযোদ্ধা নেতারা।
দৃষ্টিনন্দন ডিসপ্লে ও কুচকাওয়াজ:
মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে বিজয় দিবস উপলক্ষে নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে পতাকা উত্তোলন ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে নগরের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দৃষ্টিনন্দন ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
এমআর/টিসি