ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টলবীর বেঁচে আছেন মানুষের অন্তরে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
চট্টলবীর বেঁচে আছেন মানুষের অন্তরে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রাম: দেখতে দেখতেই কেটে গেছে একটি বছর। সশরীরে না হলেও চট্টলবীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আজও বেঁচে আছেন জনমানুষের অন্তরে।

২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জীবনাবসান হয় এই নেতার, যিনি ১৭ বছর ছিলেন চট্টলবাসীর নগরপিতার দায়িত্বে।

১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা গ্রামের বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্ম তাঁর।

বাবা রেলওয়ে কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে চসিক মেয়রের শ্রদ্ধা।                                             <div class=

ছবি: উজ্জ্বল ধর" src="https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2018October25/bg/BG-Meyor20181215113647.jpg" style="margin:1px; width:100%" />মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরে আইন কলেজে ভর্তি হলেও ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় শেষ করতে পারেননি লেখাপড়া।

১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একাত্তরে ‘জয় বাংলা’ বাহিনী গঠন করেন। সেই সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে গ্রেফতার হন। পরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ভারতে পালিয়ে যান।

উত্তর প্রদেশের তান্ডুয়া সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্কোয়াডের কমান্ডার নিযুক্ত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে পুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এর শ্রদ্ধা।  ছবি: বাংলানিউজতার আত্মজীবনীমূলক বইয়ে উল্লেখ আছে, যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তিনি গণমানুষের প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে মহিউদ্দিন গঠন করেন ‘মুজিব বাহিনী’। ওই সময় তাকে ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হয়। এরপর তিনি কলকাতায় চলে যান এবং দেশে ফেরেন ১৯৭৮ সালে।

চট্টলবীরের কবরে মোনাজাত।  ছবি: উজ্জ্বল ধরদল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের প্রিয় ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। খোঁজ-খবর রাখতেন সাংবাদিকদের। কে কোন গণমাধ্যমে চাকরি করেন, নিয়মিত বেতন পান কিনা সবই জানতে চাইতেন তিনি। পাশাপাশি কারও কোনো দুঃসময়ে অভিভাবকের মতোই পাশে থেকেছেন।

তাঁর উদ্যোগেই জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সুউচ্চ ভবন নির্মিত হয়। উৎসব পার্বণে সাংবাদিকদের জন্য উপহার পাঠাতেন তিনি। কেউ নিতে না চাইলে স্নেহের ‘বকুনি’ও দিতেন, যা শুনে কেউ আর না করতে পারতেন না।

তার কল্যাণে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য নগরে প্রতিষ্ঠিত হয় থিয়েটার ইনস্টিটউট। শিক্ষা আর পরিচ্ছন্ন সবুজ চট্টগ্রাম উদ্যোগের কথা তো সবারই জানা।

জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুস সালামের শ্রদ্ধা।  ছবি: উজ্জ্বল ধরদেশে তখন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। ওয়ান ইলেভেনের ওই সময়টায় মামলা দেওয়া হয় মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তার চশমা হিলের বাড়িটি অনেকটা ‘ভুতের বাড়ি’তে পরিণত হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরে থাকতো সেখানে।

যেখানে গেলে কেউ কোনোদিন না খেয়ে ফিরতে পারেননি, সেখানে এই পরিস্থিতিতে কমে যায় লোকজনের উপস্থিতি। পোড় খাওয়া এই রাজনীতিক জানতেন, তিনি গ্রেফতার হচ্ছেন। আত্মগোপন তো দূরে থাক, তার স্বভাবজাত কথাও বন্ধ করেননি।

এরপর গ্রেফতার হয়ে জেলে যান তিনি। আর ওই সময়টাতেই তার মেয়ে ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েকে দেখতে পরিবার প্যারোলে মুক্তি চাইলে মহিউদ্দিনকে ‘রাজনীতি ছাড়ার’ শর্ত দেওয়া হয়।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল।  ছবি: বাংলানিউজমৃত্যুশয্যায় মেয়েকে দেখতে না পেলেও সেই শর্ত মানতে রাজি হননি এই নেতা। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব পেয়েও চট্টগ্রামকে ছেড়ে দূরে যাননি কখনও। গর্ব করে তিনি বলতেন, ‘আমি চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন। ’

আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবনায় ছিল মানবসেবা। আর তা করতেও পেরেছেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে তার জানাজার নামাজে। বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও শেষবার মহিউদ্দিনকে দেখতে ছুটে এসেছিলেন মানুষ।

এক বছর পরও চশমা হিলের বাড়িটায় কমেনি মানুষের যাতায়াত। কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় প্রিয় নেতাকে এখনও স্মরণ করেন মহিউদ্দিনপ্রেমীরা।

শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে প্রয়াত নেতার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম এ লতিফ, জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুস সালাম, চসিক কাউন্সিলর সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এছাড়া পিতার কবরে দোয়া ও মোনাজাত করেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চৌধুরী বোরহানুল হাসান সালেহীন সহ পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
টিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।