ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অযত্ন অবহেলায় নগরের ৬১ বধ্যভূমি

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
অযত্ন অবহেলায় নগরের ৬১ বধ্যভূমি পাহাড়তলী বধ্যভূমি

চট্টগ্রাম: ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১১৬টি স্থানকে বধ্যভূমি হিসেবে শনাক্ত করেছে, এর মধ্যে ৬১টিই মহানগরে।

তবে অধিকাংশই অযত্ন-অবহেলায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে এসব বধ্যভূমি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

যদিও জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বধ্যভুমিসহ মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন সংস্কার ও সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।

নগরের পাহাড়তলীতে ১৫টি, লালখান বাজারে ৬টি, হালিশহরে ৫টি, গোসাইলডাঙ্গায় ৫টি, আন্দরকিল্লায় ৪টি, বাকলিয়ায় ৩টি, রহমতগঞ্জে ২টি, কাট্টলীতে ২টি, পতেঙ্গায় ২টি, বন্দর এলাকায় ২টি, কাটগড়ে ২টি, মুরাদপুরে ২টি, নাসিরাবাদে ২টি, মাদারবাড়িতে ২টি, পাঁচলাইশে ২টি এবং চন্দনপুরা, জয়পাহাড়, চান্দগাঁও, ষোলশহর, রামপুরায় একটি করে বধ্যভূমির অবস্থান।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাহাড়তলীর বধ্যভূমিতে ট্রেন থেকে নামিয়ে এবং আশপাশের এলাকা থেকে ধরে এনে হত্যা করা হয় ৫ হাজারের বেশি বাঙালিকে। হালিশহরের মধ্যম নাথপাড়া ও আবদুরপাড়া বধ্যভুমিতে বিহারিরা হত্যা করেছিল ৩৬ জন নিরীহ লোককে। এছাড়া গোসাইলডাঙ্গা, বিমানবন্দর, গুডস হিল, সিআরবি, লালখান বাজার, আন্দরকিল্লায় মীর কাসেম আলীর টর্চার সেল ‘ডালিম হোটেল’ সহ বিভিন্ন এলাকায় বাঙালিদের ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

হালিশহর নাথপাড়ার নীরু বালা দেবী মারা গেছেন ২০০৮ সালের ২ মার্চ। রাজাকাররা তার পুত্রকে হত্যার পর সেই রক্তে স্নান করিয়েছিলেন নীরু বালাকে। এছাড়া ইপিআর সদস্যদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে বাদল নাথ, অনিল বিহারী নাথ, নারায়ণ চন্দ্র বৈষ্ণবসহ শতাধিক সংখ্যালঘুকে হত্যা করে বিহারীরা। সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে থাকা খুকু নাথ, ডলি নাথ, মৃনাল নাথ ও অনিল নাথ পাননি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। হত্যাকাণ্ডের স্থানে নির্মিত স্মৃতিসৌধ বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের হৃদয়ের ক্ষত।

সেই বধ্যভূমিতে স্বাধীনতা স্মৃতি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে ২০০১ সালে নির্মাণ করা হয় ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’ স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিস্তম্ভে ঠাঁই পেয়েছে সমীরণ, সুনীল, নিশিকান্ত, প্রকাশ, অক্ষয়, শিউলী রাণী, বাদল, অনিলসহ ৪২ জন শহীদের নাম। অধ্যাপক ঢালী আল মামুনসহ সংশ্লিষ্টদের শারীরিক শ্রমে নির্মিত শহীদ বেদীর জন্য জমি দান করেন শহীদ হেমেন্দ্র কুমার নাথের সন্তান। কিন্তু চারপাশে স্থাপনা নির্মাণ ও সংস্কারের অভাবে শহীদ বেদীটির পলেস্তরা খসে পড়ছে।

হালিশহর নাথপাড়া বধ্যভূমিঅপরদিকে পাহাড়তলী বধ্যভূমির একপাশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে মাত্র ২০ শতাংশ জমি ছেড়ে দেয় ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ। ওই জমিতে গণপূর্ত বিভাগ একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে। শুধু ডিসেম্বর মাস এলেই স্মৃতিস্তম্ভ ঘিরে চলে ফুল দেয়ার প্রস্তুতি। ইউএসটিসির জিয়া ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবনের পাশে স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই বধ্যভূমি।

এছাড়া নগরে আর কোন বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি কেউই। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণে সহায়তা করা হবে। যেসব বধ্যভূমি সরকারি জমিতে নেই, সেখানে প্রতিটির জন্য গড়ে ১০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করার প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হবে।

চট্টগ্রাম বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটি আহ্বায়ক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পুরো চট্টগ্রামে প্রায় ১১১টি বধ্যভূমি রয়েছে; এর মধ্যে নগরেই আছে ৬১টি। পাহাড়তলী বধ্যভূমিটি ছিল চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় জল্লাদখানা। মামলা করেও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ করতে না পারাটা দুঃখজনক।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ডার মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও চট্টগ্রামের নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমিগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করা হয়নি, যা দুঃখজনক। অভিভাবকহীন এসব বধ্যভূমির অধিকাংশই এখন বেহাত হয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শহীদদের এসব স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।