ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সেই ৬ আফ্রিকান জেব্রার ২টি নেই!

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৮
সেই ৬ আফ্রিকান জেব্রার ২টি নেই! চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জেব্রা

চট্টগ্রাম: ৪৮ লাখ টাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ৬টি জেব্রার মধ্যে দুইটি আর নেই।

পটিয়া থেকে জেব্রার খাবার হিসেবে সরবরাহ করা সবুজ ঘাস থেকে সৃষ্ট ইনফেকশনের কারণে ওই দুইটি জেব্রা মারা যায়। এর মধ্যে একটি পুরুষ (মদ্দা), অপরটি স্ত্রী (মাদী) জেব্রা।

আরও খবর>>
** 
৪৮ লাখ টাকার ৬ আফ্রিকান জেব্রা এলো চট্টগ্রামে
** ধুলো উড়িয়ে ছোটাছুটি আফ্রিকান জেব্রাগুলোর

এরপর জেব্রাগুলোর চামড়া খুলে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য নগরের একটি বেসরকারি ট্যানারিতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া কঙ্কাল তৈরির জন্য জেব্রা দুটির দেহ মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে গত ৫ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা ৪টি পুরুষ ও ২টি স্ত্রী জেব্রা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পৌঁছে। পরদিন আনুষ্ঠানিকভাবে জেব্রাগুলো দর্শকদের জন্য অবমুক্ত করা হয়।

বাঘ, সিংহের বাইরে জেব্রাগুলো প্রচুর দর্শক আকর্ষণ করে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে জেব্রাগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২৪ ও ২৫ অক্টোবর দুইটি জেব্রা মারা যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. শাহাদাত হোসেন শুভ বাংলানিউজকে জানান, জেব্রার খাবার হিসেবে পটিয়া থেকে উন্নতমানের জার্মান ঘাস সরবরাহ দেওয়া হতো। দুইটি জেব্রা মারা যাওয়ার পর ময়নাতদন্ত করেন সিভাসু’র মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. প্রণব পাল। তখন জেব্রার পাকস্থলীতে বেশ কিছু পরজীবী পোকা পাওয়া যায়। যেগুলো ঘাসের মাধ্যমে পৌঁছেছে। হতে পারে ঘাসের পাতায় পোকা ডিম পেড়েছিল। সেগুলো জেব্রার পেটে বড় হয়ে সংক্রমণের সৃষ্টি করেছিল।

চিড়িয়াখানায় বিচরণরত ৪টি জেব্রা।  ছবি: বাংলানিউজএটিকে বিরল ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপর প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে বাকি জেব্রাগুলো সুস্থ করে তোলা হয়। যা আমাদের জন্য বড় একটি অভিজ্ঞতা।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংক্রমণ ‘ইকোয়াইন সেলুলাইটিস’ ও ‘পোকা’ চিহ্নিত হওয়ার পর আমরা সবুজ ঘাস জেব্রার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছি। এখন ভালো করে ধুয়ে চারটি জেব্রাকে দেড়শ’ কেজি সবজি দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে ২ কেজি ভূষি আর ৪ কেজি শুকনো খড়।

চিড়িয়াখানায় পশুপাখির কঙ্কাল ও চামড়ার মিউজিয়াম করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের বাঘ, সিংহ ও বিভিন্ন প্রজাতির হরিণের চামড়া রয়েছে। সেখানে নতুন সংযোজন হবে জেব্রার চামড়া। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময় পর জেব্রার কঙ্কাল তুলে তা-ও সংরক্ষণ করা হবে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি বেঙ্গল টাইগার আনা হয়। যাদের বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যানথার টাইগ্রিস টাইগ্রিস’। সম্প্রতি তিনটি বাঘ শাবকের জন্ম হয়। এর মধ্যে একটি মারা যায়। বাকি দুইটির একটি দুর্লভ ‘সাদা বাঘ’। যা দেখতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভিড় করেন কৌতূহলীরা।

গত ২১ নভেম্বর চালু করা হয়েছে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পক্ষীশালা। যার অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০ লাখ টাকা আর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কেনা হয়েছে ১৪ লাখ টাকার। এখানে ৩৪২টি পাখির মধ্যে ২০ জোড়া লাভ বার্ড, ৫০ জোড়া লাফিং ডোব, ১০ জোড়া ফিজন্ট, ১০ জোড়া রিংনেক প্যারট, ৫০ জোড়া ককটিয়েল, ১ জোড়া ম্যাকাও।

এর বাইরে চিড়িয়াখানায় সিংহ, মেছো বাঘ, বানর, ভাল্লুক, কুমির, উটপাখি, অজগর, শকুন, ময়ূর, ঘোড়া, গয়াল, চিত্রা, মায়া হরিণ, ধনেশ, শেয়ালসহ অর্ধশতাধিক প্রাণী আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৮
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।