ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গাছের শরীরে প্রচারণার পেরেক

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
গাছের শরীরে প্রচারণার পেরেক চমেক হাসপাতালের আঙ্গিনায় গাছের গায়ে বিদ্ধ অসংখ্য পেরেক। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: গাছেরও যে প্রাণ আছে, সেটা মানুষ ভুলে যায় অবলীলায়। তাই প্রচারণার পেরেক ঠুকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় তার দেহ। নগরের বিভিন্ন এলাকায় কোনমতে বেঁচে থাকা গাছগুলোর দিকে তাকালেই চোখে পড়ে এমন দৃশ্য।

গাছে পেরেক বিদ্ধ করে সাইনবোর্ড না লাগাতে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। কিন্ত বাস্তবে সে আইন কার্যকর হয়নি।

সিটি করপোরেশন আইনে ১৯৯০ এর ৯২ ধারার ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানারসহ প্রচারপত্র সেঁটে দেওয়া এবং গাছে সাইনবোর্ড লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের আওতায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানও আছে।

চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘গ্রীণ সিটি, ক্লিন সিটি’ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে নগরে সাইনবোর্ড, পোস্টার-ব্যানার অপসারণ কার্যক্রম চলমান থাকলেও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি এ অনৈতিক কার্যক্রম।

গাছের গায়ে বিদ্ধ পেরেক।  ছবি: সোহেল সরওয়ারপরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক তামরাজ উল আলম বাংলানিউজকে বলেন, যথাযথ তদারকির অভাবে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা আছে। স্ব-উদ্যোগে অনেক সংগঠন এসব সাইনবোর্ড গাছ থেকে নামানোর ক’দিন পর আবারও একই অব্স্থা দাঁড়ায়। অনেক সময় সাইনবোর্ড অপসারণ করা হলেও গাছে থেকে যায় কয়েক শ’ পেরেক। পরে সেগুলো আর তুলে নেয়া হয় না।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আঙ্গিনায় থাকা রয়েল পাম, মেহগনি গাছগুলোর গায়ে গেঁথে আছে অসংখ্য পেরেক। সিআরবি রাস্তার মাথা এলাকার রেইন-ট্রি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া গাছেও পেরেকের ক্ষত। নগরে সড়কের পাশে কিংবা মাঝখানে থাকা গাছও রেহাই পায়নি পেরেক দানবদের অত্যাচার থেকে।

উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. সায়মন জাকারিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং অণুজীব ঢোকে। এতে গাছের ওই জায়গায় দ্রুত পচন ধরে। ফলে খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে গাছ মারাও যেতে পারে।

গাছের গায়ে বিদ্ধ অসংখ্য পেরেক।  ছবি: সোহেল সরওয়ারতিনি বলেন, ‘গাছের পরিবহন সিস্টেম হলো জাইলেম আর ফ্লোয়েম। পানির সঙ্গে দ্রবীভূত খনিজ লবণও জাইলেম টিস্যুর মাধ্যমে ওপরে প্রবাহিত হয়। আবার গাছের পাতা থেকে যে খাদ্য তৈরি হয়, সেটা গাছের বাকল দিয়ে ভেতরে যায়। বাকলের নিচে ফ্লোয়েম এর অবস্থান। পাতা থেকে সেটা গাছের নিচের দিকে আসে। যদি গাছে ছোট আকারের পেরেক ঠুকে দেয়া হয়, তাহলে ফ্লোয়েম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে পাতায় উৎপাদিত খাদ্য সঞ্চালনে বাধা পাবে। আর যদি বড় পেরেক ঠুকে দেয়া হয়, তাহলে পানি ও খনিজ লবণ সঞ্চালনে বাধা পাবে। ’

পরিবেশবিদরা বলছেন, যেখানে গাছ লাগিয়ে তার পরিচর্যা দরকার, সেখানে উল্টো গাছের ক্ষতির চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মুক্ত বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অভাবে একসময় হয়তো প্রাণটাই হারাতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।