ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রফতানি পণ্য চুরিতে ৩৫ সদস্যের চক্র

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৮
রফতানি পণ্য চুরিতে ৩৫ সদস্যের চক্র গ্রেফতার সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: পণ্য পরিবহন করা কাভার্ডভ্যান তালা মেরে সিলগালা করা থাকে। পণ্যের কার্টনও থাকে বরাবর। শুধু থাকে না কার্টনের ভেতরে থাকা রফতানি পণ্য।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাভার্ডভ্যানে পরিবহন করা রফতানি পণ্য অভিনব কৌশলে চুরি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ১০ বছর ধরে তারা এসব চুরি করে আসছে।

এ চক্রে রয়েছে কাভার্ডভ্যান চালক, চালকের সহকারী, ব্যবসায়ী, দোকানদার, ডিপো মালিক, নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, ক্রেতাসহ ৩৫ সদস্যের একটি চক্র। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা ছড়িয়ে আছেন।

তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ঘটে একেকটি চুরির ঘটনা।  

চুরির জন্য টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ঢাকা বা অন্য জায়গা থেকে রফতানির জন্য পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরুর পর।  

এ চক্রের সদস্য কাভার্ডভ্যান চালক, সহকারী চট্টগ্রামে অবস্থান করা অন্য সদস্যদের প্রথমে ফোন করে চালানের তথ্য দেন। পণ্যের পরিমাণও জেনে নেন তারা। তারপর সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন।  

কাভার্ডভ্যান কুমিল্লা, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড বা চট্টগ্রাম শহরে ঢোকার পর সুযোগ বুঝে পুরো চুরির কাজ শেষ করা হয়। এসব জায়গায় তাদের নির্ধারিত ডিপোতে কাভার্ডভ্যান ঢুকিয়ে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যেই চুরির কাজ শেষ করে।  

কাভার্ডভ্যানের সিলগালা করা তালা না ভেঙে তারা দরজার নাট খুলে ফেলে। তারপর ভেতরে থাকা কার্টন থেকে অর্ধেক পণ্য সরিয়ে নিয়ে পুনরায় স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। কোনো কার্টন থেকেই সব পণ্য সরানো হয় না। তিন ভাগের এক ভাগ বা অর্ধেক এভাবে পণ্য সরানো হয়।

পরে আবার এসব পণ্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় শপিংমলগুলোতে বিক্রি করা হয়। কিছু কিছু রফতানিও করে তারা।

সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া এ চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

গত এক মাসে মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট ও নগরের কালুরঘাট এলাকায় মোট চারটি চুরি করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন এ চক্রের সদস্য শাহাদাত হোসেন। কিন্তু পুলিশের ধারণা এ চুরির সংখ্যা আরও বেশি। বুঝতে না পারার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেনি।  

শাহাদাত হোসেন পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের দলে রয়েছে কাশেম, ইকবাল, সাদ্দাম, কাওসার, ড্রাইভার আনোয়ার, ড্রাইভার বাদশা, জামাল, ফারুক, রাশেদ, শ্রমিক রাশেদ, শাহ আলমসহ অন্তত ৩৫ জন। এদের কয়েকজনকে সে চিনলেও সবাইকে চেনে না বলে দাবি তার।
 
যেভাবে সন্ধান এ চক্রের

গত ৫ সেপ্টেম্বর সদরঘাট থানার স্ট্র্যান্ড রোডের আদিলা অ্যাপারেলস থেকে জাপানে রফতানির জন্য ৫৪৫ কার্টন তৈরি পোশাক সীতাকুণ্ড পোর্টলিংক ডিপোতে নিয়ে শিপিং এজেন্টকে হস্তান্তর করে। পরে প্রক্রিয়া শেষে সেগুলো বায়ার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পণ্যগুলো চেক করার সময় একটি চালানে ২ হাজার ৭৩৪ পিস জ্যাকেট কম পায় এবং একটি কার্টনের ভেতর সিম সংযুক্ত একটি মোবাইল সেট খুঁজে পায়। তখন বায়ার প্রতিষ্ঠান আদিলা অ্যাপারেলসকে বিষয়টি জানালে গত ১৬ নভেম্বর আদিলা অ্যাপারেলসের কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সদরঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন।

১৭ নভেম্বর ভোরে নগর ও হাটহাজারী থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. কাওসার হোসেন (৩০), সাজ্জাদ হোসেন (২৬), শাহাদাত হোসেন (২৯) ও আনোয়ার হোসেন (২৯) নামে চারজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে শাহাদাত হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।  

এদিকে ১৮ নভেম্বর নগরের বন্দর এলাকায় কাভার্ডভ্যান থেকে রফতানি পণ্য চোরাই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার দুইজন হলেন-শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার থিরোপাড়া এলাকার আবদুল মজিদের ছেলে মো. কাশেম (৪৩) ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হাজিপাড়া এলাকার মো. আবদুল লতিফের ছেলে মো. রাশেদ (২৮)।

১১ নভেম্বর বিদেশে রফতানির জন্য কাভার্ডভ্যানে করে ঢাকার সাভার জে কে নিট কম্পোজিট নামক পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা কাপড় থেকে ৪ হাজার ৫৬৮ পিস কাপড় চুরির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাদের গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, চারজনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে আমরা কাজ করছি।  

তিনি বলেন, তাদের একটি গ্রুপে ৩৫ জনের মতো সদস্য রয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার কাভার্ডভ্যান চালক, চালকের সহকারী, ব্যবসায়ী, দোকানদার, ডিপো মালিক, নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, কাস্টমার এ চক্রের সদস্য। তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে একেকটি চুরির ঘটনা ঘটে।

ওসি মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, কাভার্ডভ্যান কুমিল্লা, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড বা চট্টগ্রাম শহরে ঢোকার পর সুযোগ বুঝে পুরো চুরির কাজ শেষ করা হয়। এসব জায়গায় তাদের নির্ধারিত ডিপোতে কাভার্ডভ্যান ঢুকিয়ে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যেই চুরির কাজ শেষ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮ 
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad