ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সমুদ্রগর্ভে চট্টগ্রামের ১০ বর্গকিলোমিটার জমি

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
সমুদ্রগর্ভে চট্টগ্রামের ১০ বর্গকিলোমিটার জমি চট্টগ্রামের জরিপ চিত্র

চট্টগ্রাম: জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে চট্টগ্রামের ১০ বর্গকিলোমিটার জমি সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে গেছে। এর প্রভাবে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক গবেষণায় এ চিত্র ফুটে উঠেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চট্টগ্রাম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে গত ৪০ বছরে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ বর্গকিলোমিটার জমি সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ১.৭৩ বর্গকিলোমিটার এবং ফেনী জেলায় প্রায় ৬৫ বর্গকিলোমিটার চর জেগেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, ফেনী, বরগুনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা।

নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা গত কয়েক বছরে প্রায় ৩ ফুট দেবে গেছে।

স্যাটেলাইটের ভূতাত্ত্বিক জরিপ, জলবায়ু পরিবর্তনের সমীক্ষা নিয়ে পরিচালিত গবেষণায় পতেঙ্গার নেভাল কলোনী এলাকা,  কক্সবাজার সৈকত তীরবর্তী জমি পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি ফেনী নদীর মোহনা, খুলনা ও বরিশালের উপকূলবর্তী অঞ্চল নিয়ে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

চট্টগ্রাম সমুদ্র সৈকত।  ছবি: বাংলানিউজবন বিভাগ সূত্র জানায়, পতেঙ্গাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূল রক্ষায় ১৯৯২ ও ২০০২ সালে প্রায় ১শ’ হেক্টরেরও বেশি এলাকা জুড়ে ঝাউ বনায়ন করা হয়। এসব ঝাউ গাছ ৪০ থেকে ৮০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বেড়ে ওঠে। এগুলো সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস-বন্যা থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে। অথচ অপরিকল্পিতভাবে সৈকতের বালু উত্তোলন এবং বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় গাছগুলোকে বাঁচানো যাচ্ছে না।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের কারণে বছরে গড় হারে তাপমাত্রা বাড়ছে ১ থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভবিষ্যতে বছরে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান সবচেয়ে বেশি নিচে নেমে যাবে। পাশাপাশি কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার মানুষের জীবনযাত্রার মান ১৮ শতাংশের নিচে নামবে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় বনের পরিমাণ কমে আসায় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ও ভূমি ধসের পরিমাণ আরও বাড়বে।

 জানা গেছে, চট্টগ্রামে কৃষি খাস জমির পরিমাণ প্রায় ৯৯৩ একর। ১৯৯০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে প্রতিবছর ৯ শতাংশ হারে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এখানে বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮০০ মিলিমিটার। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের সময় নগরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ভবিষ্যতে উপকূলীয় আরও কিছু এলাকা সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর রিভার, হারবার অ্যান্ড ল্যান্ডস্লাইড রিসার্চ (সিআরএইচএলআর) এর চেয়ারম্যান ড. মো. রিয়াজ আকতার মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক জনশ্রুতি আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। আমরা বিগত ৩০-৪০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বড় কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্টাল লাইন কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেটা কী ভূমির দিকে যাচ্ছে নাকি সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে-এসব নিয়ে কাজ করেছি। যদিও সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ভূমি তলিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায় নি, তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।