ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘আমার কষ্টের টাকা মেরে দিয়েছে ওসেপ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮
‘আমার কষ্টের টাকা মেরে দিয়েছে ওসেপ’ ওসেপে সঞ্চিত টাকা ফেরতের দাবিতে তিন শতাধিক গ্রাহকের বিক্ষোভ। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: ‘প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে ভিক্ষা করেছি। কষ্টের সেই টাকা জমিয়েছিলাম ওসেপের কাছে। সব টাকা মেরে দিয়েছে। আমাদের আমানত খেয়ানত করেছে। কার কাছে গেলে আমার টাকা ফিরে পাব?’

রোববার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ওসেপের গ্রাহকদের বিক্ষোভ সমাবেশে আসা হোসনে আরা বাংলানিউজকে এভাবেই কষ্টের কথা জানান।

শুধু হোসনে আরা নন।

অর্গানাইজেশন অব সোশ্যাল সার্ভিস অ্যান্ড এলিমিনেশন অব পোভার্টি (ওসেপ) তিন শতাধিক গ্রাহক বিক্ষোভে অংশ নেন। বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ।
সবার হাতে কিস্তি জমা দেওয়ার বই, চুক্তির দলিল। ভিক্ষা করে, রিকশা চালিয়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ফেরি করে, হোটেল আর বিয়েশাদির মসলা পিষে, তৈরি পোশাক কারখানা আর বাসা-বাড়িতে কাজ করে বছরের পর বছর তারা কিস্তি জমা করেছেন। কেউ দৈনিক, কেউ সাপ্তাহিক, কেউ মাসিক কিস্তিতে আবার কেউ এককালীন টাকা জমিয়েছেন।

বৃদ্ধ সাবিনা খাতুন জানান, কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করে মাসে ৩০০ টাকা করে জমিয়েছিলাম। কত বেলা উপোস দিয়েছি, কিন্তু কিস্তির টাকা ভাঙিনি। আমার চার বছর ধরে জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গেল ওরা।

সঞ্চিত টাকা ফেরতের দাবিতে ওসেপের গ্রাহকদের বিক্ষোভ।  ছবি: সোহেল সরওয়ার‘সংসারের বাজারের টাকা চুরি করে মাসে ৩০০ টাকা করে দিয়েছিলাম ওসেপকে। স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিছু একটা করার। এখন লাভ তো দূরে থাক আসলই পাচ্ছি না। ’ বললেন নূর নাহার।

আয়শা বেগমের স্বামী সিএনজি অটোরিকশা চালান। সংসারের টাকা থেকে বাঁচিয়ে ৮৪ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলেন ওসেপে। বললেন, ‘স্বামীকে কী জবাব দেব! ওই টাকায় যদি ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভালোমন্দ খেতাম তা-ও ভালো ছিল। ’

রাতের বেলা দারোয়ানি করেন ফজল আহমদ। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সুখের আশায় দিনে ১০০ টাকা করে জমিয়েছিলাম। ২০ হাজার ১৬০ টাকা জমেছিল। আফসোস, আম-ছালা সব গেল। গরিবদের সঙ্গে চিটারি করলো ওসেপ। ’

রিকশাচালক মো. শফির ৬০ হাজার টাকা, আবদুস শহীদের ১৫ হাজার ২৫০ টাকা, মো. ফয়সলের ১৬ হাজার টাকা, নাজমা বেগমের ২২ হাজার ১০০ টাকা, ঝাউতলার মনোয়ারা বেগমের ৯৮ হাজার টাকা, ডিজেল কলোনির সামসুন নাহার ও তার মেয়ে নূরজাহান বেগমের ৩ লাখ টাকাসহ অসংখ্য গ্রাহকের টাকার দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেন।

বিক্ষোভের সময় চুক্তির দলিল, কিস্তির জমা বই প্রদর্শন করেন ওসেপের গ্রাহকেরা।  ছবি: সোহেল সরওয়ারওসেপ গ্রাহক মো. আজগর আলী বাংলানিউজকে জানান, আমরা একটি জমা বই পেয়েছি যেটির গ্রাহক নম্বর ৫৭ হাজার ১৫৪। আমাদের বিশ্বাস অন্তত ৫০ হাজার নিম্নআয়ের মানুষের ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওসেপ। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কষ্টের টাকার লাভ চাই না। আমাদের আসল ফিরিয়ে দিতে হবে। আমাদের কাছে জমা বই, সরকারি স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সবই আছে।

তিনি বলেন, সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষ ওসেপের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ছবি আর সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর (১৫০০২) মুদ্রিত দেখে আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বাস করেছিলাম। তাদের স্লোগান ছিল ‘ওসেপের সদস্য হব, নিজের জীবন নিজে গড়ব’। এখন তারা আমাদের পথে বসিয়ে দিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮
এআর/এসি/টিসি   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।