ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুই বাংলায় পরিবেশ সচেতনতা বেড়েছে: ড. নির্মল চন্দ্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
দুই বাংলায় পরিবেশ সচেতনতা বেড়েছে: ড. নির্মল চন্দ্র আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. নির্মল চন্দ্র দাশ। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবেশ সম্পর্কিত সচেতনতা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. নির্মল চন্দ্র দাশ।

মা-মাটির টানে চট্টগ্রাম ছুটে আসা কানাডা প্রবাসী এ বিজ্ঞানী বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন মন্তব্য করেন। এ সময় উঠে আসে তার শৈশব, ছাত্রজীবন আর নানা অর্জনের কথা।

দুই বাংলার পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব নানা উদ্যোগ চোখে পড়ছে।

কারখানার অশোধিত বর্জ্য শোধন, কালো ধোঁয়া, পাহাড় কাটা ও ক্ষয়, উচ্চ শব্দের হাইড্রোলিক হর্ন, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, বৃক্ষনিধন, অননুমোদিত পলিথিন, ইটভাটায় কাঠের ব্যবহার বন্ধ, পাটজাত ব্যাগের ব্যবহার ও বৃক্ষরোপণ অভিযান বৃদ্ধি, গৃহস্থালি বর্জ্য অপসারণে ডোর-টু-ডোর পদ্ধতিসহ অনেক বিষয়ে কাজ চলছে। এ সব বিষয় আমাকে আশান্বিত করে।    

রাউজান উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নের হিঙ্গলা গ্রামে ১৯৩৪ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন নির্মল চন্দ্র দাশ। মাত্র ৭ বছর বয়সে বাবা প্রসন্ন কুমার দাশকে হারান। পরের বছর পাঁচ বছর বয়সী ভাইকে হারান। পরের বছর ছিল দুর্ভিক্ষ।

আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. নির্মল চন্দ্র দাশ।  ছবি: উজ্জ্বল ধরসেই স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘মা ও বোন ওই সময় নিজেরা উপোস থেকে আমাকে ভাত খেতে দিতেন। একপর্যায়ে আমাকে লাঙল চালাতে হয়। কিন্তু মায়ের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনা চালিয়ে যাই। মা আমাকে কলাপাতায় ‘অ’ ‘আ’ লেখা শিখিয়েছেন। মা বলতেন, শিক্ষাই বড় ধর্ম। শিক্ষা ধর্মের শত্রু নেই। ’

ড. নির্মল চন্দ্র ১৯৫১ সালে রাউজান আরআরএসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে তিনটি লেটারসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তখন চট্টগ্রামে দুইটি কলেজ ছিল। একটি চট্টগ্রাম কলেজ, অন্যটি কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজ। ২০ মাইল হেঁটে কানুনগোপাড়া যেতেনে তিনি। লজিং থেকে পড়তেন। প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। তখনো লজিং থাকতেন। স্বর্ণপদকসহ বিএসসি ডিগ্রি নেন। ৪০০ টাকা বৃত্তিসহ ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, জৈব রসায়নে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ৬ মাস তেজগাঁও পাকিস্তান সায়েন্স কাউন্সিলে কাজ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন অধ্যাপক পদে।

কানাডা যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিয়ের পর কানাডায় সিভি পাঠিয়েছিলাম। ১৯৬৩ সালে বৃত্তি পাই। প্লেনের টিকিটও পাঠিয়ে দিল। স্যুটকেস ও খালি পকেটে কানাডা যাই। লন্ডনে ছয় ঘণ্টা উপোস ছিলাম। আবদুস সাত্তার নামে আমার এক ছাত্রের বাসার সামনে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে ৫ ডলার ধার নিয়েছিলাম। ২৫ বছর পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে অবসর নিই। আমার ৫২টি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। লিখেছেন ‘আমার আমি’ নামের একটি আত্মজীবনীও।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মায়ের আত্মার শান্তির জন্য জ্ঞানদা স্মৃতিবৃত্তি চালু করেছি রাউজান আরআরএসি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমার বাবার নামে প্রসন্ন মেমোরিয়াল হল, স্বজন দয়াময়ী, শরদ কবিরাজ, বাসন্তী, সুরেন্দ্র, নিরু, বকুল, প্রসন্ন, মুছা শাহ, গোলক স্মৃতিবৃত্তি চালু করেছি। প্রাণের টানে চট্টগ্রাম ও কলকাতা ছুটে আসি। পৃথিবীর অনেক তীর্থ স্থান ঘুরেছি কিন্তু যখন জন্মভূমিতে আসি মনে হয় স্বর্গে এসেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এআর/টিসি          

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।