ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজ-মুজিব-লিটন নাকি জাপার মাহমুদুল!

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজ-মুজিব-লিটন নাকি জাপার মাহমুদুল! মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, মুজিবুর রহমান সিআইপি, আবদুল্লাহ কবির লিটন ও মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাকি মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ।

তবে বিএনপি-জামায়াতের দুর্গ হিসেবে পরিচিত বাঁশখালীর আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এই আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে ইতোমধ্যে ১৩ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এরমধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনের কথাই ভাবছেন অধিকাংশ ভোটার।

দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও আবদুল্লাহ কবির লিটন বাঁশখালীতে পৃথকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসলেও মুজিবুর রহমান সিআইপি আলাদাভাবে রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, মহাজোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরই জাতীয় পার্টির (জাপা) অবস্থান। একক প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জাপার পক্ষে একক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।

জোটগতভাবে নির্বাচন হলে আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া।

এই আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে আরও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানুল কবির চৌধুরীর ছেলে চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব, ড. জমির উদ্দিন সিকদার, আবুল হোসেন মো. জিয়া উদ্দিন, অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম শরিফী, মুজিবুল হক চৌধুরী, নিগার সুলতানা ও এসএম রিয়াজউদ্দীন চৌধুরী সুমন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রায় সকলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন রয়েছে । নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পাবেন, সেটি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন। যেহেতু সংসদ নির্বাচনে জোটের একটি বিষয় আছে, সবকিছু বিবেচনা করে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, সেহেতু দলে বিভাজন থাকতেই পারে। তবে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যে প্রার্থীকে নৌকার মাঝি করা হবে, তাকে বিজয়ী করবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ’

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে যোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও জনপ্রিয় ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন মফিজুর রহমান।

স্থানীয়রা বলছেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বাঁশখালীর উন্নয়ন ও উপকূলবর্তী এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হন। সরকার এই কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে প্রায় ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে।

বাঁশখালীর উত্তর সীমানা আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ সেতুর পর থেকে দক্ষিণ বাঁশখালীর নাপোড়া-প্রেমবাজার পর্যন্ত প্রধান সড়ক সংস্কারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের উল্লেখযোগ্য সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করেছেন মোস্তাফিজুর।

পাশাপাশি বাঁশখালীর একমাত্র হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স ও এক্স-রে মেশিন, আদালত ভবন ও উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ, ইকোপার্কের উন্নয়ন, ফায়ার সার্ভিস ভবন উদ্বোধন করেছেন তিনি।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান সিআইপি বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বেশ কিছু স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও নির্মাণ, গরিব ও দুঃস্থদের দান-খয়রাত করে এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ভিশন ভিক্ষাবৃত্তি দূরীকরণ ও স্বাবলম্বী করতে বাঁশখালীর ২০০ গরিব পরিবারকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভ্যান গাড়ি দিয়েছেন তিনি। এমনকি নিজের প্রতিষ্ঠিত ১৯টি শিল্প-কারখানায় প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন মুজিবুর রহমান।

শিক্ষাক্ষেত্রে মুজিবুর রহমানের বাবা নজির আহমদ মাস্টারের সুনামও নাপোড়া, শেখেরখীল, ছনুয়াসহ বাঁশখালীর মানুষের কাছে সমাদৃত। ক্লিন ইমেজ হিসেবে আলাদা কোন গ্রুপ ছাড়াই বাঁশখালীতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে পৃথকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। এমনকি প্রথম পর্যায়ে তার প্রার্থিতা নিশ্চিত হলেও দলীয় নির্দেশনায় সরে যান লিটন।

বাঁশখালীতে লিটনের আছে আলাদা গ্রুপ। আওয়ামী লীগের একাংশ ও তরুণ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে এটি ‘লিটন গ্রুপ’নামে পরিচিত। গত রমজান মাস জুড়ে বাঁশখালীর প্রায় সব ইউনিয়নে আখতারুজ্জামান চৌধুরী স্মৃতি সংসদের ব্যানারে ইফতার মাহফিল করে বাঁশখালীর সাধারণ মানুষের মন জয় করার চেষ্টা চালান লিটন।

তবে আওয়ামী লীগ মহাজোটগতভাবে এবারও নির্বাচন করলে একক প্রার্থী হিসেবে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি ভোটারদের মাঝে আলোচনায় আছে।

শিক্ষার উন্নয়নে এলাকায় মহিলা কলেজ, মাদ্রাসা ও টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপন করেন তিনি। বাঁশখালীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মন্তব্য করে ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন মাহমুদুল ইসলাম।

এর আগে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ব্যানারে বাঁশখালী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহমুদুল ইসলাম। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের ৭ মে ও ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ব্যানারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এসবি/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad