ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১০ বছর অ্যাম্বুলেন্সেই কাটালেন রাসেদা

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
১০ বছর অ্যাম্বুলেন্সেই কাটালেন রাসেদা ১০ বছর অ্যাম্বুলেন্সেই কাটালেন রাসেদা আক্তার। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: সকাল সাতটা। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভারত সরকারের উপহার’ লেখা অ্যাম্বুলেন্সটি দামপাড়ায় থামালেন। চালকের আসন থেকে বেরিয়ে এলেন রাসেদা আক্তার। পরনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) লোগোসহ ইউনিফর্ম। রাত জাগার ক্লান্তি তার মুখে। কিন্তু চোখের তারায় আলোর নাচন, ঠোঁটে যুদ্ধজয়ের হাসি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আড়াইশ’ চালকের মধ্যে নারী চালক একজনই। তিনি রাশেদা।

এটা নিয়ে গর্ব করতেই পারেন তিনি। ১০ বছর ধরে চালাচ্ছেন চসিকের অ্যাম্বুল্যান্স ।

শুরুর গল্পটা ২০০৮ সালের। তার মুখে শোনা যাক-এখন নারীরা উড়োজাহাজ চালাচ্ছে, ট্রেন চালাচ্ছে, জাহাজ চালাচ্ছে। কিন্তু আমি যখন গাড়ি চালানো শিখি তখন খুব বেশি হলে এনজিও’র দুই-একজন নারীকে দেখা যেত মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। চিটাগাং উইম্যান চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা মনোয়ারা হাকিম আলীর অনুপ্রেরণায় ২০০৮ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) হালকা মোটরযান চালানোর প্রশিক্ষণ নিই। এরপর আনসার ভিডিপি, মনোয়ারা আপা, শওকত মোস্তফার সহায়তায় লাইসেন্সের জন্য আবেদনের যে স্লিপ-তা জমা দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে চাকরিটা নিই।

‘১০ বছর ধরে চালকের চাকরি করছি। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস চালানোর সুযোগ থাকলেও আমি চালাচ্ছি না। শুধু অ্যাম্বুলেন্সই চালাই। কারণ মুমূর্ষু রোগী ও ডাক্তারদের আনা-নেওয়াটা আমার কাছে কাজের ফাঁকে সেবার মতো মনে হয়’ যোগ করেন রাসেদা।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চসিকের পরিবহন পুলের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের ডাক্তার, সবাই সহযোগিতা করছেন বলেই এত বছর একটানা কাজ করতে পারছি। সবার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তবে মাঝেমধ্যে রোগীর স্বজনরা যে ভুল বোঝেন না তা কিন্তু নয়। আমি ওদের দোষ দিই না, কারণ তাদের মাথা ঠিক থাকে না তখন।

অ্যাম্বুলেন্স চালক রাসেদা আক্তার ও তার ড্রাইভিং লাইসেন্স।  ছবি: বাংলানিউজচসিকের পরিবহন পুলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী সুদীপ বসাক এক প্রশ্নের জবাবে বাংলানিউজকে বলেন, চসিকে আড়াইশ চালক আছেন। এর মধ্যে নারী চালক একজনই, রাসেদা আক্তার। তার কাছে দিনের পালা, রাতের পালা বলতে কিছু নেই। সবসময় দায়িত্ব পালনে তিনি সচেষ্ট।  

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট কুমিরা এলাকার মৃত মাহবুবুল হকের মেয়ে রাসেদা। ২ ভাই ৪ বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এখন প্রতিদিন কাজ শেষে গ্রামের বাড়িতেই ফিরে যান তিনি।

এ প্রসঙ্গে রাসেদা বলেন, ‘শুরুতে আমার মাসিক বেতন ছিল ৫ হাজার টাকা। এখন পাই ১১ হাজার ৮৮০ টাকা। এখানে বাসা ভাড়া করে থাকার উপায় নেই। আগে যদি আমার বাড়িতে আসা-যাওয়াতে দিনে ৫০ টাকা খরচ হতো এখন তা ৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবুও আমি সঠিক সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হতে সচেষ্ট থাকি। কাজটা আমার ভালো লাগে। ’

কোনো ধরনের সমস্যায় পড়েন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টি, রোদ, কুয়াশা, জলজট সব কিছুতে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর অভিজ্ঞতা আছে আমার। তবে রোগীর অবস্থা যখন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে তখন যদি যানজট থাকে আমি গাড়ি থেকে নেমে ট্রাফিক পুলিশকে বলি, সাইড করে দেন। নয়তো এপাশের গাড়ি আটকান আমি ওপাশ দিয়ে যাবো। রোগীর অবস্থা কিন্তু খারাপ। তখন তারা সহযোগিতা করেন। আর হ্যাঁ, চলতি পথে যদি কোনো চাকা নষ্ট হয় তখন কিন্তু আমি নিজে চাকা খুলে নতুন চাকা লাগাতে পারি। গাড়ি বিগড়ে গেলে সারাতে পারি। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সময় গাড়ির সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিই। কারণ এরসঙ্গে শুধু আমার জীবন নয়, রোগী-ডাক্তারদের ভাগ্যও জড়িত।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।