আজ ১ অগ্রহায়ণ, বাংলা পঞ্জিকার অষ্টম মাস। সময়ের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সংস্কৃতি উৎসব ‘নবান্ন’ নিয়ে এমন স্মৃতিচারণ করলেন সংস্কৃতিপ্রেমী অধ্যাপক জয় প্রকাশ দে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সনাতন মাড়াই প্রথা এখন বিলুপ্তপ্রায়। ধান ভানা হয় না আর ঢেঁকিতে।
তবুও কুয়াশাসিক্ত অগ্রহায়ণ আসে বাংলায়, নতুন ধানের গন্ধ ম-ম করে গ্রামের বাতাসে। নাগরিক জীবনে নতুন ধান বা চালের অস্তিত্ব না থাকলেও শেকড় সন্ধানী মানুষ চিরায়ত ঐতিহ্য সংরক্ষণে আয়োজন করে নবান্ন উৎসব। শহরের বিভিন্ন মিলনায়তনে, গাছতলা কিংবা মাঠে বসছে নবান্ন নিয়ে কথামালা আর নাচ-গানের আসর।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের কবি মুকুন্দরাম তার ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে অঘ্রাণের বন্দনা করেছেন। বলেছেন, গোলাঘর এ মাসে ধানে ভরপুর থাকতো। কিষাণ-কিষাণীরা মাততেন আনন্দ আয়োজনে। চলতো নিমন্ত্রণ আর নাইয়র নেয়ার ধুম। খেজুরের রস দিয়ে নতুন চালের পায়েস, ফিরনী আর নকশী পিঠা বানিয়ে পাঠানো হতো পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশীদের কাছে। এ সময় পল্লী প্রাণ জেগে উঠতো নিশীথের নিদ্রা থেকে।
হিন্দু প্রথা অনুযায়ী, নবান্ন উৎসবে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাও পালন করতেন গাঁয়ের মানুষ। নতুন ধান উৎপাদনের সময় তারা দেবী অন্নপূর্ণার পূজা করতেন। ঘরে ধান এলে প্রয়াত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে করতেন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।
সম্রাট আকবরের আমলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে বাংলা বছরের গণনা করা হতো যা ‘ফসলী সাল’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এরপর ইংরেজ শাসনামলে বৈশাখ মাস থেকে বাংলা বছর গণনার নিয়ম চালু করা হয়।
ইতিহাস বলছে, ১৯৫০ এর দুর্ভিক্ষের পর বাংলার কৃষক তার জমি হারাতে শুরু করে। গ্রামে এখন প্রায় কৃষক হয়ে গেছেন ভূমিহীন দিনমজুর। জমি হারিয়ে, তারা মহাজনের গোলায় ফসল তুলছেন।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘এই হেমন্তে, এই নবান্নে কাটা হবে ধান/এবার আবার শূন্য গোলা ভরবে’। কিন্তু শূন্য গোলা আর ধানে ভর্তি হয়নি। গোলা শূন্য রেখেই অনেক কৃষককে পালন করতে হচ্ছে নবান্ন উৎসব। চিত্রকর এস এম সুলতানের আঁকা ছবির হৃষ্টপুষ্ট ও পেশিবহুল কৃষক হয়তো আর বাস্তবে ধরা দেবে না। তবুও হেমন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে খেলা করা পাকা ধানের শীষ দেখে কৃষকরা স্বপ্ন দেখে, আবারও তারা মাতবে অঘ্রাণে নবান্ন উৎসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এসি/টিসি