ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের আট আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে চায় জামায়াত

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৮
চট্টগ্রামের আট আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে চায় জামায়াত

চট্টগ্রাম: ঘনিয়ে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াত।

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলটির নিবন্ধন ইতোমধ্যে বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লাও হারিয়েছে তারা।

তাই দলটি স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জামায়াতের বিভিন্ন সূত্রেও এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে।

জানা যায়, সংসদীয় আসনগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দলটি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ প্লাস (এ+) ক্যাটাগরির আসন আছে ৫টি। অর্থাৎ এসব আসনে তাদের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা শতকরা ৮০ ভাগ। এ ক্যাটাগরির আসন আছে ৩টি। এসব আসনে তাদের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা শতকরা ৬০ ভাগ।  

চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ প্লাস (এ+) ক্যাটাগরির আসনগুলো হলো- হালিশহর-ডবলমুরিং (চট্টগ্রাম-১০), সাতকানিয়া-লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম-১৫), বাঁশখালী (চট্টগ্রাম-১৬), কক্সবাজার সদর (কক্সবাজার-৩) ও মহেশখালী-কুতুবদিয়া (কক্সবাজার-২)।  

এ ক্যাটাগরির আসনগুলো হলো-ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম-২), সীতাকুণ্ড ও নগরের কিছু অংশ (চট্টগ্রাম-৪) এবং উখিয়া-টেকনাফ (কক্সবাজার-৪)।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় পরিষদ এসব আসনে প্রার্থীও নির্ধারণ করে রেখেছে। এলাকায় জামায়াত ও শিবির গোপনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের আড়ালে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।  

আট আসনে জামায়াতের নির্ধারিত প্রার্থীর মধ্যে আছেন: চট্টগ্রাম-১০ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার-৩ আসনে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ, কক্সবাজার-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, চট্টগ্রাম-২ আসনে অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-৪ আসনে অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান এবং কক্সবাজার-৪ আসনে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী।  

নথি ও জামায়াত সূত্র জানায়, যদি ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয় তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব আসন চাইবে জামায়াত।  আর জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়া হলে এসব আসনে সরাসরি প্রার্থী দেবে তারা। যেকোনও মূল্যে নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামবে দলটি।

বর্তমানে জামায়াতের হেভিওয়েট দুই প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী ও আ ন ম শামসুল ইসলাম কারাগারে আছেন। শাহজাহান চৌধুরীকে গত ৩ আগস্ট খুলশী থানাধীন মুরগির ফার্ম এলাকার একটি বাসায় ‘গোপন বৈঠক’ থেকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।  

এছাড়া গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া থানায় দায়ের হওয়া ভাঙচুর ও নাশকতার একটি মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত আ ন ম শামসুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  

নির্বাচনের আগে তারা মুক্তি না পেলে কারাগার থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তের কথাও জানা গেছে। নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে কর্মীরা নিয়মিত সাংগঠনিক বৈঠক করছে বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

জামায়াত ও শিবিরের মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করলেও বক্তব্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।  

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাকলিয়া এলাকায় একসময় জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি থাকলেও পুলিশের তৎপরতায় তাদের কার্যক্রম নেই। তবু আমরা সতর্ক আছি। বাকলিয়া থানা পুলিশের হাতে বেশ কয়েকজন জামায়াত-শিবির নেতা গ্রেফতার হয়েছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে জামায়াতের পরিকল্পনা সম্বলিত বিভিন্ন নথি আমরা পেয়েছি। সেখানে তাদের প্রার্থীদের নাম রয়েছে। সিদ্ধান্ত আছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। তাদের কার্যক্রম আমরা নজরদারিতে রেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮
এসকে/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।