ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি হবে চট্টগ্রামে

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৮
সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি হবে চট্টগ্রামে গবেষণাগারে বক্সে সংগৃহিত সাপ। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ। দেশের ইতিহাসে প্রথম সাপের কামড়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) প্রতিষ্ঠিত হয় আলাদা গবেষণাগার।  

প্রথমে ৫টি এবং পরে আরও ৭টি বিষধর সাপকে লালন-পালন করা হয় ওই গবেষণাগারে। কোবরা ও গোখরাসহ বিষধর ১২টি সাপের মধ্যে দুই মাসের মাথায় ৩টি কোবরা বাচ্চা ফুটায় ৩৮টি।

 অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষসে হিসেবে গবেষণাগারে বাচ্চাসহ এখন ৫০টি সাপ লালন-পালন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ১২টি সাপ থেকে ভেনমও (বিষ) সংগ্রহ করা হয়েছে।

গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া চমেকের পুরাতন ভবনের সুতপা লেকচার গ্যালারিতে ৩৬টি বক্সে রাখা হয়েছে এসব সাপ ও সাপের বাচ্চা। সেখানে নিবিড় পরিচর্যায় তাদের পালন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে। আর সাপ কামড়ানোর পর প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৩ শতাংশ।

চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিবছর এই হাসপাতালে গড়ে এক হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে আহত হয়ে ভর্তি হন। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর  পর্যন্ত  ১ হাজার ৮০ জন ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৮১৯ জনকে সাধারণ সাপ কামড় দেওয়ায় তাদের দেহে বিষ পাওয়া যায়নি। তবে ২৩ জনের শরীরে বিষধর সাপের বিষ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে সুস্থ হয়েছে ১৮ জন, আর মারা গেছে ৪ জন।

দেশে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এখন যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়, তা ভারতসহ অন্যান্য দেশে থেকে আসছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, একেক দেশের সাপের বিষ একেক রকম। ভারতের গোখরা সাপের বিষ আর বাংলাদেশে এই সাপের বিষ একইরকম নয়। অন্যান্য সাপের বেলায়ও একই। তাই ভারতের তৈরি অ্যান্টিভেনম ইঞ্জেকশনে বাংলাদেশের কোনো রোগী ভালো নাও হতে পারে। অথচ বছরের পর বছর ধরে ভারতের অ্যান্টিভেনম দিয়েই বাংলাদেশে সাপের কামড়ের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এরই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আর্থিক সহায়তায় ৫ বছর মেয়াদি অ্যান্টিভেনম তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়। এ কাজে দায়িত্ব পায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং জার্মানির গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা।

প্রকল্পের মূল দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে পরিপক্ক ১২টি সাপ থেকে ভেনম সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া দু’মাস লালন-পালন করার পর ৩টি ক্রেইট (কোবরা) ৩৮টি বাচ্চা দেয়। প্রথম পর্যায়ের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৫ বছর, আশা করছি এর মধ্যেই অ্যান্টিভেনম তৈরিতে আমরা সফল হবো।

তিনি বলেন, বিষ সংগ্রহের উপযোগী করে তোলার জন্য এই সাপগুলো পালন করা হচ্ছে। প্রাপ্ত ভেনমে কোন ধরনের প্রোটিন উপাদান আছে, তা নির্ণয় করা এবং যেসব অ্যান্টিভেনম দেশে আছে সেগুলো কতটা কার্যকরী হয়, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে শেষ করে পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরির পর তা বিভিন্ন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করা হবে। সফলতা পেলেই মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে এই অ্যান্টিভেনম।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।