জানা গেছে, ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটন শিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুরো দেশকে ৮টি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে ।
২০১৬-২০১৮ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করে নানা উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে গত ৯ বছরে ৬ হাজার ৬৯৯ দশমিক ১৬ কোটি টাকা পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে আয় হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পর্যটকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক পর্যটনকে উৎসাহিত করতে ‘বিমান হলিডেজ’ উইং চালু করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
পর্যটনের স্থান হিসেবে এ দেশে আছে ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, সিলেট ও তিন পার্বত্য জেলা, পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এবং বিভিন্ন জেলায় বেশকিছু ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। সেন্টমার্টিন, রামু, চকরিয়ায় প্রাচীন স্থাপনাগুলো দেখতে আসেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার ৬০০ ফুট উঁচুতে। এছাড়াও নীলগিরি, ডিম পাহাড়, থানছি-আলীকদম সড়ক, বগা লেক, কেওকারাডংয়ের চুড়া, নাফাকুম, সাঙ্গু নদী, স্বর্ণজাদি ও বেশকিছু ঝর্ণা আছে সেখানে।
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি, শুভলং, সাজেকসহ বেশকিছু স্থান পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খাগড়াছড়িতে আলুটিলার গুহা, টেরেং, রিচাং ঝর্ণাসহ অনেক দর্শনীয় স্থানও পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।
পর্যটন নগর চট্টগ্রামে আছে ফয়’স লেক, বাটালী পাহাড়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, ইতিহাসের নীরব সাক্ষী ওয়ার সিমেট্রি, আদালত ভবন, চেরাগী পাহাড়, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, সিআরবি, বাটালি হিল, পাথরঘাটা গির্জা, বৌদ্ধ মন্দির, পিকে সেন ভবন, চন্দনপুরা মসজিদ, অলি আউলিয়ার দরগাহ, মাস্টারদা সূর্যসেনের স্মৃতি বিজড়িত অস্ত্রাগার দখলের স্থান, প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের স্মৃতিধন্য পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন।
এছাড়া প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদার সৌন্দর্য দেখে মোহিত হন পর্যটকরা। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়, ইকোপার্ক, গুলিয়াখালী সী-বিচ, মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক, রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি পার্ক, ভাটিয়ারীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য মন ছুঁয়ে যায় ভ্রমণপিপাসুদের।
চউক সূত্রে জানা যায়, পর্যটনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সংশোধিত আউটার রিং রোড প্রকল্পে পরিবর্তন আনা হয়। সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বিশেষ পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। পতেঙ্গা থেকে হালিশহর পর্যন্ত সাগরপাড়ের ৫ কিলোমিটার সড়ক হবে বিশেষ পর্যটন এলাকা। থাকবে ৬টি জেটি। পর্যটকরা বোটে চড়তে পারবেন । বসার জন্য স্থাপন করা হবে বেঞ্চ। একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার পর্যটকের স্থান সঙ্কুলানের ব্যবস্থা রাখা হবে। সাগরপাড়ে ৫০ ফুট জায়গা ওয়াকওয়ে হিসেবে রাখা হবে। কিছু নির্দিষ্ট দোকান, কিডস জোন, গ্রীন জোন ও পার্কিং সুবিধা থাকবে।
চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয় গড়ে তুলেছে ‘মোটেল সৈকত’। পর্যটন করপোরেশনের ১০ তলা বিশিষ্ট ‘মোটেল সৈকত’ ২০১৬ সালে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে।
পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের পর্যটনখাতে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০জনের। পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছিল ২৩ লাখ ৪৬ হাজার, যা মোট কর্মসংস্থানের ৪ দশমিক ১ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিল এর পূর্বাভাস হচ্ছে, গড়ে ১ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে এই সংখ্যা ২০২৬ সালে ২৮ লাখে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্র জানায়, ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট এবং অ্যাভিয়েশন খাতে ২০১৪ সালে যাত্রী ছিলো ৯০ লাখ। ২০৩৫ সালে এই সংখ্যা পৌঁছুবে ২২ কোটি ১০ লাখ। ২০১৪ সালে এই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছিল ১৩ লাখ। ২০৩৫ সালে ১৪৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৩ লাখ। ২০১৪ সালে এই খাত থেকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্ত হয়েছিলো ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০৩৫ সালে ১৪২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও পর্যটন) মো. ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্যটন শিল্পের বিকাশে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ জামান খান কবিরও বাংলানিউজের কাছে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারের গৃহিত উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেন।
পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) জিয়াউল হক হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, সারাদেশে পর্যটকদের সেবা প্রদানের জন্য ৪২টি বিভিন্ন প্রকার পর্যটন সুবিধা যেমন হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, পিকনিক স্পট, সুইমিং পুল, পর্যটন তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি জানান, কক্সবাজার, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন এলাকার পর্যটন স্থানগুলোর আধুনিকায়ন, ৬৪ জেলায় পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশ, মহাসড়কের পাশে দর্শনীয় স্থান সংরক্ষণ, পর্যটকদের সেবা প্রদান সহ নানান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৮
টিসি