বৃহস্পতিবার (০১ নভেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ এবং সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী ছকিনা বেগম (৭০)।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- বোয়ালখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫), সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মনির আহামদ (৪২) ও পুলিশের কথিত সোর্স মো. রাসেল (৩২)।
বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ভুপাল চন্দ্র চৌধুরী।
ভুপাল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, বোয়ালখালী থানার দুই পুলিশ সদস্য ও তাদের এ সোর্সের বিরুদ্ধে পটিয়া আদালতের নৈশ প্রহরী ও তার বৃদ্ধা মাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ছকিনা বেগম।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, মামলাটি গ্রহণ করে আদালত দুটি আদেশ দিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে এফআইআর রেকর্ড করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং দণ্ডবিধির অন্য ধারাগুলোতে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে বোয়ালখালীর ঘোষখীল আব্দুল মুনাফের বাড়িতে যান বোয়ালখালী থানার এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন, এএসআই মনির আহামদ ও পুলিশের কথিত সোর্স মো. রাসেল। এ সময় ছকিনা বেগমের ছেলে নুরুল আমিনকে খুঁজতে থাকেন তারা। তখন ছকিনা বেগম বলেন, নুরুল আমিন শহরে চাকুরিতে গেছে। তখন তারা ছকিনা বেগমকে একটা কাগজে টিপসই দিতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালির পাশাপাশি মাথার চুল ধরে মুখে থাপ্পড় মারতে থাকেন এসআই দেলোয়ার হোসেন। তখন এগিয়ে আসেন ছকিনা বেগমের ছেলে পটিয়া আদালতের নৈশপ্রহরী নুরুল হাছান। তখন মা-ছেলে দুইজনকেই মারতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। এতে ছকিনা বেগমের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিঁড়ে যায়। একপর্যায়ে হাছানকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায় তারা। নেওয়ার আগে স্থানীয় লোকজনকে পুলিশ বলে, ওয়ারেন্ট থাকায় হাছানকে নিয়ে যাচ্ছে।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, একইদিন রাত ৮টায় থানা হাজতের পাশের একটি কক্ষে নিয়ে মেঝেতে ফেলে হাছানকে বুট জুতা দিয়ে গলায় লাথি মারতে থাকে এএসআই মনির আহামদ। পরে লোহার রড দিয়েও পৈশাচিক কায়দায় মারতে থাকেন এসআই দেলোয়ারসহ। এক লাখ টাকা না দিলে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ফাঁসানো ও ক্রসফায়ারের হুমকিও দেয় তারা। সেদিন রাত ২টায় পুলিশকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সাদা কাগজে সই করে মুক্তি পান হাছান। ঘটনার পরের দিন তিনি প্রথমে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।
এদিকে নুরুল হাছান ও তার মা ছকিনা বেগমকে নির্যাতন ও টাকা আদায় করে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন ও এএসআই মনির আহামদ।
এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন দাবি করেন, নুরুল হাছান ও তার মা ছকিনা বেগম উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছেন। তাই নুরুল হাছানকে থানায় ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের ওপর হামলা করে থাকলে নুরুল হাছানকে কেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা বাংলানিউজকে বলেন, এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। যদি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত হবে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৮
এসকে/টিসি