সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ভিক্ষুক আছে। গত সাত বছরে এ কর্মসূচিতে এসেছে সাফল্য।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগর এলাকা ও ১৫ উপজেলায় চলছে ‘ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম’। ধনী ব্যক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও যাকাত তহবিল থেকে পাওয়া অনুদান এ খাতে ব্যয় করা হচ্ছে।
নগর ও জেলার পথ-ঘাট, বাস ও রেলস্টেশন, দোকান, বাজারে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিতদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই সমাজসেবা অধিদফতরের কাছে। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জরিপ চালানো হলেও ভিক্ষুকের সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়নি। তবে জেলা প্রশাসন উপজেলাগুলোতে ৪ হাজার ২১৭ জন ভিক্ষুক চিহ্নিত করেছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে উপজেলায় বেশ ক’জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য ব্যবসা উপকরণ, সেলাই মেশিন, রিকশা, ভ্যান, চায়ের দোকান, ছোট আকারের হাঁস-মুরগির খামারের উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। অনেক ভিক্ষুককে দর্জি ভাতাসহ প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর হিসাব মতে, দেশে ১২ লাখ মানুষ ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত। তাদের মধ্যে আছে শিশুও। অন্যের সহায়তায় বেঁচে থাকা এসব ভিক্ষুক সাধারণ মানুষের কাছে কখনও পায় সহানুভূতি, আবার কখনও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার। পাশাপাশি মানুষকেও সইতে হয় অনাকাঙ্ক্ষিত উৎপাত।
জানা যায়, নগরের ১৬টি স্থানে ভিক্ষুকদের আনাগোনা বেশি। মাজারকেন্দ্রিক ভিক্ষুকরা সকাল হতেই নেমে যায় এ কাজে। কালুরঘাট, রেল স্টেশন, নতুন ব্রিজ, বাস টার্মিনাল, পতেঙ্গা সৈকত, আগ্রাবাদ, ষোলশহর, মুরাদপুর, নিউমার্কেট এলাকায় দল বেঁধে তারা ভিক্ষা করে। এতে শিশুদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন মেলায় রোগাক্রান্ত শিশুকে শুইয়ে রেখে চলে ভিক্ষাবৃত্তি। রমজান মাসে বেড়ে যায় মৌসুমী ভিক্ষুকদের উৎপাত।
২০১৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে নগরের ভাসমান লোকজন ও ভিক্ষুকদের ছবিসহ তালিকা তৈরি করে সিএমপি। ২০১৭ সালে রেলস্টেশনকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মহানগর এলাকায় ভিক্ষুক মুক্তকরণ কাজও শুরু হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছে, ‘সকল পর্যায়ের দারিদ্র্য নির্মূলকরণ’। এর আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত এবং মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
যাচাই বাছাইয়ের পর রাউজানে ২৫০, রাঙ্গুনিয়ায় ১৯৩, পটিয়ায় ২৯০, কর্ণফুলীতে ৬৪, আনোয়ারায় ২৭২, সাতকানিয়ায় ২৩৭, লোহাগাড়ায় ৪৩০, চন্দনাইশে ৪৪৩, বাঁশখালীতে ৫৭৪, মিরসরাইয়ে ৫৩৮, হাটহাজারীতে ৮১, ফটিকছড়িতে ৫৫০, বোয়ালখালীতে ১৩০, সীতাকুণ্ডে ৭৮, সন্দ্বীপে ৮৭ জন ভিক্ষুক চিহ্নিত হয়।
চসিক সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসন পুরো কর্মসূচির সমন্বয় করছে। কাউন্সিলরদের কাছ থেকে ভিক্ষুকের তালিকা সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ধাপে ১৫ উপজেলার ২২৫ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়। জেলা প্রশাসন নগরসহ জেলাজুড়ে নাম-ঠিকানা, ছবিসহ পুনর্বাসনযোগ্য ভিক্ষুকদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করছে।
২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে চট্টগ্রামে আসা বিদেশি খেলোয়াড় ও দর্শকদের ভিক্ষুকের উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য ৫০জন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুককে সেবকের চাকরি দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। ওই সময় পুনর্বাসনের জন্য ৩শ' জন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের তালিকাও করা হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর নগর ও জেলার ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয় বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। এর মধ্যে উপজেলাগুলোতে আরও ২৫০ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করার কথাও বলেন তিনি।
মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের ১০টি বিশেষ প্রকল্পের মধ্যে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ডাটাবেজের ভিত্তিতে পুনর্বাসনযোগ্য সব ভিক্ষুককে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা হবে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৮শ’ জন ভিক্ষুককে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
এসি/টিসি