ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংস্কারের উদ্যোগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৮
বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংস্কারের উদ্যোগ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংস্কারের উদ্যোগ

চট্টগ্রাম: প্রায় ৩০ বছর আগে চট্টগ্রামে সংস্কার করা হয়েছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঞ্চালন লাইন। ১৫টি সাবস্টেশনও চলছে জোড়াতালি দিয়ে।

সংস্কারের অভাবে সঞ্চালন লাইনে প্রায়ই ত্রুটি দেখা দেয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রান্সফরমারে আগুন ধরে যাওয়া এবং যান্ত্রিক গোলযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও প্রায় ঘটে।

অনেক সময় ঝড়-বৃষ্টিতে তার ছিঁড়ে যায়, গরমে সঞ্চালন লাইন ওভারলোড হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

এ অবস্থায় চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে নেয়া হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫৫২ কোটি টাকার প্রকল্প। এ প্রকল্পের অধীনে সঞ্চালন লাইনের আধুনিকায়ন করা হলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।

চট্টগ্রামে বর্তমানে ৩৩/১১ কেভি সঞ্চালন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা আছে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। প্রতিবছর ১৫ শতাংশ চাহিদা বাড়ছে। নগরে ২ হাজার ৭শ’ কিলোমিটার এবং সিটি করপোরেশনের ৮০ শতাংশ সড়কে আছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা বাড়ছে। এসব এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। তাই ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে সরকার এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।

গত ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর তিনি আরও বলেন, বর্তমান সঞ্চালন লাইন দিয়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৩ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। কিন্তু ২০৩০ সালে সেখানে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে ২ হাজার ৮৩১ মেগাওয়াট। এজন্য চট্টগ্রামের সঞ্চালন লাইন আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানা যায়, গত ১২ বছরে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৪-৫ গুণ। একটি ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে ১০০ পরিবারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবহারও বেড়েছে। ফলে ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড হয়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গৃহিত প্রকল্পের আওতায় সাবস্টেশনগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো হবে। মাটির তলদেশ দিয়ে ৮৩ কিলোমিটার তার নিয়ে যাওয়া হবে। ১১ কেভির ৮শ’ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন টানা হবে। ৮ হাজার ২৮ কিলোমিটার বিতরণ লাইনের সংস্কার করা হবে।

শিল্প মালিকরা বলছেন, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালাতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। পুরনো বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। তাই সঞ্চালন লাইনের আধুনিকায়ন জরুরী।

চট্টগ্রামে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৪২০ মেগাওয়াটের চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিকলবাহা ৬০, ১৫০ ও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাটহাজারী ও দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্র, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র অধিকাংশ সময়ই সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়ে। জাতীয় গ্রিড থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের অধীনে ১০ লাখ ও পল্লী বিদ্যুতের ১০ লাখ গ্রাহক আছে। সঞ্চালন লাইনের নানা ত্রুটির কারণে উৎপাদিত বিদ্যুৎও ঠিকভাবে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। আরও ৭ হাজার নতুন ট্রান্সফরমার বসানো হবে। ২৬টি নতুন সাব স্টেশন নির্মাণ ও ১৫টির সংস্কার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৮

এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।